Friday, July 13, 2007

নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ //চাই বহুরৈখিক উদ্যোগ, দরকার সহভাগীতা

এখন নাগাদ মানুষের ইতিহাস বিভাজিত। বিভাজনের মধ্যে আছে ইতিহাস, সংস্কৃতি, সম্পদ এবং শ্রম। মানব প্রজাতির মধ্যেও এই বিভাজন লিঙ্গভেদে ক্রিয়াশীল। এই প্রজাতির পুরো অর্ধেকটাই ইতিহাস থেকে অদৃশ্য। তাকে তুলে আনা হয়েছে আধিপত্যশীল লিঙ্গের প্রয়োজন মত, তাদের ইচ্ছা ও আবেগ অনুযায়ী। সর্বদাই উপস্থিত কিন্তু সর্বদাই আত্মপরিচয়হীন এই প্রজাতিই হচ্ছে নারী।
বাংলাদেশের নারী সমাজ অবহেলিত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত। নানামাত্রিক সহিংসতার শিকার। এইসব অবস্থান তার অসহায়ত্ব ও অধঃস্তনতাকে প্রকাশ করে। নারীর এই সরলরৈখিক অবস্থান দরিদ্র বা নিন্মবিত্ত বা উচ্চবিত্ত শহর বা গ্রাম সকল ক্ষেত্রেই উপস্থিত। এর ধরণ কেবল মাত্র ক্ষেত্র বিশেষে তার চরিত্রকে বদল করে নেয়। কিন্তু আমাদের গ্রামীন জীবনে নারী নির্যাতনের সহিংসতার রয়েছে নানামাত্রিকতা ও ভিন্নতা।
সুবিধার জন্য আমরা আগে সহিংসতা বলতে কী বুঝি তা আলোচনা করে নিতে পারি। যে তৎপরতা নারীর শরীর, মন বা যৌনতার ক্ষতি হয় বা হতে পারে, যা স্বাধীনতার জন্য হুমকি হয়ে ওঠে, তাই নারীর জন্য সহিংসতা। পুরুষপালিত সমাজ ব্যবস্থার কারণে একটি পরিবারে নানা কারণে নারী নির্যাতন সংঘটিত হয়। নারী নির্যাতন শুরু হয় একজন নারী জন্ম নেবার আগ থেকে মৃত্যূ নাগাদ। নারী-পুরুষের মধ্যকার অসম ক্ষমতা সম্পর্কই হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা বা নারী নির্যাতনের কারণ ও পরিণাম দুই-ই। নারী নির্যাতন আসলে নারীর অধঃস্তনতার আরেকটি রূপমাত্র। নারীর প্রতি এ সহিংসতা হচ্ছে সমতা ও উন্নয়ন, শান্তির লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম প্রধান বাধাঁ। একই সাথে নারী নির্যাতন দারিদ্র্য হ্রাসকরণের পথে একটি অন্যতম বড় বাধাঁ। বিশ্বব্যাংক সমীক্ষা মতে, বিশ্ব জুড়ে ধর্ষণ ও পারিবারিক নির্যাতনের ফলে ১৫-৪৪ বছর বয়সী নারীরা যক্ষা, গর্ভকালীন সংক্রামক, ক্যান্সার বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া ও তাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় বৃদ্ধি পায়। নারী নির্যাতন নারী ক্ষমতায়নকে সংকুচিত করে। সেই সাথে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় রকমের বাধাঁ তৈরি করে। আমাদের প্রতিদিনের চলার পথে আমরা যে সব নারী নির্যাতনের ধরন ধারণ দেখতে পাই-ক্স প্রত্যক্ষ বা প্রকাশ্যে দৈহিক নির্যাতনক্স মানসিক বা মনস্তাত্ত্বিক নির্যাতনক্স যৌন নির্যাতনক্স প্রজনন অধিকার হরণসংক্রান্ত নির্যাতনক্স প্রচলিত রীতি-নীতি বা কুপ্রথাভিত্তিক নির্যাতনক্স নারীকে পণ্যে পরিণত করাক্স সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নিপীড়ন
গত জুলাই ২০০৫ মাসে নোয়াখালীতে মোট ০৬ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সংঘটিত হয়। এর মধ্যে ০৬টি-ই সংঘটিত হয় নারীর বিরুদ্ধে। ১৬ জুলাই দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয় ‘সেনবাগে ধর্ষণের অভিযোগে একজনকে গণপিটুনি’, একই দিন দৈনিক প্রথম আলো ও দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত হয় ‘বেগমগঞ্জে স্বামী-ননদের হাতে গৃহবধু খুন’, ১৭ জুলাই তারিখে দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত হয় ‘ ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে নোয়াখালীতে গৃহবধুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা, ধর্ষককে পুলিশে সোপার্দ’, বাড়িঘর ও জমিজমা দখলে প্রভাবশালীদের ষড়যন্ত্র, নোয়াখালীর অসহায় নারী সেলিনা বিচার ও নিরাপত্তা চান’-এ সংবাদটি ২৩ জুলাই তারিখে দৈনিক ভোরের কাগজে ও ২৫ জুলাই তারিখে সাপ্তাহিক নয়া সংবাদে প্রকাশিত হয়, ২৬ জুলাই তারিখে দৈনিক ভোরের কাগজে ‘চাটখিলে স্কুলছাত্রী ধর্ষিতা, ধর্কষকে থানায় সোপার্দ’, এ সংবাদটি প্রকাশিত হয়, ‘বেগমগঞ্জে খোকা মেম্বার বাহিনীর হামলা, গৃহবধূর শ্লীনতাহানী, আহত ৩, এ সংবাদটি ২৫ জুলাই তারিখে সাপ্তাহিক নয়া সংবাদে প্রকাশিত হয়। এ তথ্যগুলো চারটি দৈনিক (প্রথম আলো, ভোরের কাগজ, সমকাল, আমাদের সময়) ও নোয়াখালী থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে সংগ্রহ করা হয়। আমরা জানি আমাদের চারপাশে প্রতিদিন এ চেয়ে অনেক বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমে ওঠে আসে খুবই কম। কিন্তু আমাদের গ্রামগুলোতে যে সব উন্নয়নকর্মীরা কাজ করছেন তারা প্রতিদিন গ্রাম থেকে ফিরে এসে অনেক কষ্ট ও নারীর বিরুদ্ধে পরিচালিত নানা সহিংসতার কথা বর্ণনা করেন। গণমাধ্যম ও যোগাযোগ কর্মীরা যে সব ঘটনার কথা তুলেআনেন তা মূলত যেসব ঘটনা দৃশ্যত: হয় তা বলতে পারেন। কিন্তু নারীর বিরুদ্ধে পরিচালিত হয় এ চেয়ে অনেক বেশি সহিংসতা। ‘গৃহ নির্যাতন’ অদৃশ্য নির্যাতনের সবচেয়ে বড় অধ্যায়। আর্থ-সামাজিক বিবেচনায় নারী নির্যাতনের নানা ধরণ থাকলেও ‘গৃহ নির্যাতন’ আমাদের জীবনের প্রতিটি শ্রেনীতে বিদ্যমান। তসলিমা নাসরিনের এক চিঠি তিনি তার বোনকে লিখেছিলেন, ‘পৃথিবীর সব স্বামী বিয়ের পর স্ত্রীর ওপর তাদের যে অধিকার আছে সে অধিকার ফলাতে চেষ্টা করে। কেউ কেউ স্থুল ভাবে, কেউ কেউ সুক্ষভাবে করে। যেমন ধর, হঠাৎ বললো এই এক গ্লাস পানি দাও তো। অথচ হাতের কাছেই পানির গ্লাস।’ এ ধরনের আচরণ বা পুরুষভাবাপন্নতা দিয়ে হয় নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা। বেশির ভাগ সময়ই নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুরু হয় পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময়। অবন্তি হারুন ও আইনুন নাহার গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়নের মিথ প্রবন্ধে বলেছিলেন, গ্রামীন বাংরাদেশে যে ধরণের পারিবারিক প্রথা চালু রয়েছে তাতে গৃহস্থালীর অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোষত্রে দ্ধন্ধ ও আপেষের যে সমবেত প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল, তা শুধুমাত্র নিজ নিজ আয়ের ওপর নিয়ন্ত্রন দ্ধারা বোঝা সম্ভব নয়। আমরা এ কথা দিয়ে আজকের সময়ে নারীরা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হলেও পারিবারিক প্রতিদিনের জীবন চক্রে নারীরা একনো আদিম সময় ও প্রথা দ্বারা বেষ্টিত। ফারহাত জাহান, আরশাদ সিদ্দীকি ও জাভেদ হোসাইন নোয়াতালীর চরাঞ্চলে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা শিরোনামে একটি গবেষণা পরিচালানা করে। গবেষণায় দেখা যায় সোখানকার নারীরা ‘ভাত রান্না হতে দেরী হওয়া, সময় মতো গামছা লুঙ্গি হাতের কাছের না পাওয়া-এ সবের কারণে স্বামীর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠা, দু’চারটি চড়-থাপ্পড় দিয়ে দেয়াকে তারা দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ বলে মনে করেন। স্বামী কতৃক মার খাওয়ার মধ্যদিয়ে নাক দিয়ে রক্ত পড়া, দাঁত পড়ে যাওয়া, হাত-পা মচকে বা ভেঙ্গে যাওয়া, চুলের মুঠি ধরে লাথি, লাঠি বা ঝাড়– দিয়ে বদম প্রহারকে মারধোর এর অন্তর্ভূক্ত করেন তারা।
নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও পিআরএসপি‘ ইতোমধ্যে সরকার দারিদ্র্য হ্রাসকরণ কৌশলপত্র তৈরি করেছে। আগামিতে এ কৌশলপত্রের আলোকে দেশ পরিচালিত হবে। পিআরএসপিতে উন্নয়ন ও সুশাসনের সাধে নারীদের কথা বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ঘটনা ২০০৭ সালের মধ্যে ১০০ ভাগ রিপোটিং করা হবে ; রিপোর্টেড ঘটনার ৫০ ভাগ হ্রাস করা হবে। এরজন্য এ সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সমূহের হেফাজতে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা ; চিকিৎসা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা ; নারীর অধিকারকে আক্রান্ত করেছে এমন মামলাগুলো বিচারে সিডিও বিধিমারা প্রয়োগ করার জন্য বিচার ব্যবস্থাকে সংবেদনী করার কথা বলেছে। একই সাথে এ দলিলে আগামিতে আক্রান্তদের মানসিক সহায়তা প্রদান ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আইন প্রয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
বাংলাদেশের নারী উন্নয়ন নীতি১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে একটি নারী উন্নয়ন নীতি প্রণীত হয়। বেইজিং সম্মেলনের পর এ নীতিমালা প্রণযন করা হয়। বাংলাদেশ এ নীতিমালার জন্য বিভিন্ন সময় প্রশংসিত হয়েছে। কিন্ত ইতোমধ্যে এ নীতিমালা নিয়ে একটি হাস্যকর অবস্থা তৈরি করেছে। কে বা কারা নীতিমালার বিশেষ বিশেষ অংশ পরিবর্তন করে ফেলেছে। বিশেষত: যে সব জায়গায় নারীদের সম্মান ও মর্যাদার কথা লেখা ছিলো সেসব জায়গা বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। এটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য দারুন লজ্জার একটি বিষয়। এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মধ্যেও এক ধরণের হাস্যকর জবাবদিহিতা তৈরি হয়েছে। মন্ত্রী, সচিব, সহকারী সচিব কেউ-ই জানেন না কে আইনের এ পরিবর্তন এনেছে। আমরা যে যে অবস্থানে তেকে কাজ করি না কেন আমাদের এ ইস্যুতে দারুন প্রতিবাদ ও ঘৃণা জ্ঞাপন করা উচ্তি। এটি নারী নীতিমালার প্রতি রাষ্ট্রীয় সহিংসতার নামান্তর।
জাতিসংঘ চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন১৯৯৫ সালের ৪-১৫ সেপ্টেম্বর চীনের বেইজিং এ জাতিসংঘ চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। সম্মেলনে জাতিসংঘের ১৯০টি সদস্য দেশের সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। ঐতিহাসিক এই সম্মেলনে সকলে একমত হয়ে ‘বেইজিং ঘোষণা’ ও ‘কর্মপরিকল্পনা’ গ্রহণ করেন। ৩৮ ধারা বেইজিং ঘোষণা মূলত সরকার সমূহের অঙ্গিকারনামা। পৃথিবী জুড়ে নারী সমাজের বৈষম্যপূর্ণ অসম অবস্থা ও অবস্থানের বিষয়ে একমত হয়ে সরকারসমূহ নারীর পূর্ণ সমতা, উন্নয়ন ও শান্তির লক্ষ্যে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। বেইজিং ঘোষণায় নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধ ও বিলোপে সমন্বিত পদক্ষেপের কাথা বলা হয়েছে। ঘোষণায় সরকার, স্থানীয় সরকার, বেসরকারি সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও ব্যক্তিখাত, বিশেষভাবে গণমাধ্যম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের করণীয় তে বলা হয়েছে, ক্স সহিংসতার শিকার নারীদের ত্রাণ, চিকিৎসা ও জীবিকার সুবিধা দিতে হবে। জনসাধারণকে যুক্ত করার জন্য সহিংসতাবিরোধী ঐতিহ্যগত সূত্র বের করতে হবে। ক্স বাড়াতে হবে সচেতনতা। ক্স উন্নত করতে হবে তথ্য ও শিক্ষার সকল রকম ব্যবস্থা করতে হবে। ক্স সহিংসতার বিরুদ্ধে সবাইকে সহমর্মী করে তোলার জন্য ব্যবস্থা করতে হবে। ক্স নারী পুরুষের পারষ্পরিক মর্যাদা উপলব্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষার প্রবর্তন করতে হবে।
বেইজিং ঘোষণায় সকল সরকার, মালিক পক্ষ, ট্রেড ইউনিয়ন, স¤প্রদায়গত ও যুব সংগঠন এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর করণীয় নির্ধারণ করা হয়ক্স শিক্ষাক্ষেত্র, কর্মক্ষেত্র ও অন্যান্য জায়গায় সহিংসতা বিরোপের কর্মসূচি গ্রহণ ও বিকশিত করতে হবে।ক্স কিশোরী বা তরুণী বিপদে পড়তে পারে এমন জায়গায় চিকিৎসাসহ সহায়ক সুবিধা থাকতে হবে।ক্স সকল সামাজিক কুপ্রথা বিলোপ করতে হবে, যা বৈষম্য তৈরি করে।
তবে এ কথা সত্য যে, নারী নির্যাতনের ভয়াবহতা দ্রুত বৃদ্ধির পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতাও ক্রমাগত বাড়ছে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রচারণা জোরদার করা, নির্যাতিত নারীদের সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে এনজিও, নারী সংগঠন তথা সুশীল সমাজ আজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
তবু আমাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় আমরা নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হ্রাস করতে আমরা কিছু সাধারণ নির্দেশনা তৈরি করতে চাই।
আইন সংশোধন ও সংস্কার১. নারী নির্যাতনের বিচার পাবার ক্ষেত্রে আগে আইন ব্যবস্থায় বিদ্যমান এ সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতাগুলি চিহিৃত করতে হবে এবং তা সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।২. নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করার একটি ভিত্তি স্বরূপ নারীর উত্তারধিকার ও সম্পত্তি অধিকারকে আইনগত স্বীকৃতি প্রদান করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
আইনের প্রয়োগ১. বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনকানুন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে।২. ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের বিচারের ক্ষেত্রে ক্যামেরা ট্রায়ালের ব্যবস্থা করতে হবে।
পুলিশ প্রশাসন১. নারী নির্যাতন সংক্রান্ত এফআইআর রেজিস্টিশনের পথে সকল বাধাঁ দূর করতে হবে, এখানে এসে নারীরা পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়।২. পুলিশকে নির্যাতন তদন্তকালে তাদের সক্রিয়তা বা নিস্ক্রিয়তার জন্য জবাবদিহি ও দায়বদ্ধ থাকতে হবে।৩. সকল পুলিশ স্টেশনে ‘নারী সেল’ গঠন করতে হবে এবং নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগ পুরোপুরি তদন্ত করার মত পর্যাপ্ত ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা তাদের প্রদান করতে হবে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা১. নারী নির্যাতনের বিচারের ক্ষেত্রে আইনী ব্যবস্থার সফল উদাহরণগুলি গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে এ দ্বারা মানুষ সচেতন ও সংবেদনশীল হবে।২. নারী নির্যাতন সংক্রান্ত প্রতিবেদন ররগেভাবে উপস্থাপন করা যাবে না।৩. ধর্ষণের শিকার যে তার নাম, ছবি, ঠিকানা সংবাদে ব্যবহার করা যাবে না, বরং ধর্ষকের নাম, ছবি, ঠিকানা প্রকাশ করতে হবে।
আইনজীবীদের দায়১. আইনজীবীদের অবশ্যই বিদ্যমান কোড অব এথিকস্ বা নৈতিক বিধি মেনে চলতে হবে।২. নারী নির্যাতনের বিচার করার জন্য বিচার বিভাগকে সচল রাখতে ব্যক্তি, এনজিও ও অন্যান্য সংগঠনের সাথে আইনজীবীদের আলাপ আলোচনা ও মতবিনিময়ে যেতে হবে।চাপ প্রয়োগকারী দল গঠন১. সহিংসতার গুরুত্বপূর্ণ চলতি ঘটনাগুলি সনাক্তকরণ ও সেগুলির বিচার কার্য তদারকি করা এবং আইনী প্রক্রিয়াকে উৎসাহ দেবার জন্য নাগরিকদের নিয়ে চাপ প্রয়োগকারী দল গঠন করতে হবে।
সহায়ক পরিষেবা প্রদান১. সহিংসতার শিকার এমনতর পরিবারকে নানাবিধ সহায়তা প্রদানের জন্য ফ্যামিলি কাউন্সিলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।২. সহিংসতা পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি, এনজিও ও অন্যান্য সংগঠন মিলে একটি জাতীয় কমিটি গড়ে তুলতে হবে।
শেষে করবো গান্ধীজির একটা উক্তি দিয়ে। গান্ধীজি বলেছিলেন ‘সার্বজনিন কাজে নারীর যোগদানই সেই কাজের সাফল্য আনতে পারে। যে সমাজে নারী সম্মানিতা নন সেই সমাজ সভ্য বলে পরিগণিত হতে পারে না।’

No comments: