Tuesday, May 15, 2007

উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়ার : পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সাহসী হাতিয়ার

(ইন্দোনেশিয়ার সুকাভুতিতে অনুষ্ঠিত ওপেন সোর্স এক্টিভিস্টদের সম্মিলনী ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ‘এশিয়া সোর্স ২’-তে আমিও অংশগ্রহণ করি। ফিরে এসে আমি এ লেখাটি রচনা করি। আপনার মতামত পেলে লেখাটি আরো ভালো করা যাবে।)_______________________________________

দুনিয়াব্যাপী কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের প্রপাইটরি সফটওয়ার ব্যবহারের ফলে বহুজাতিক সফটওয়ার কোম্পানিসমূহ তাদের মুনাফার পাহাড় ক্রমশ ভারী করছে। এ থেকে মুক্তি এবং সফটওয়ারের ওপর সামাজিক মালিকানা তৈরির প্রত্যয়ে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে উন্মুক্ত সোর্স মুভমেন্টের ১২০ জন যুবক একত্রিত হয় ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা দ্বীপের সুকাভুতিতে। প্রপাইটরি সফটওয়ার ব্যবহারের বদলে উন্মুক্ত সোর্স ব্যবহার ও উন্নয়নের জন্য এবং মুভমেন্টকে আরো বেগবান করার জন্য তাদের একীভুত কর্মকৌশল গ্রহণ করে।ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব জাভা দ্বীপের সুকাভুতিতে ২২-৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ওপেন সোর্স এক্টিভিস্টদের সম্মিলনী ও প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ‘এশিয়া সোর্স ২’। ২৫টি দেশের প্রায় ১২০ জন ‘ওপেন সোর্স’ এক্টিভিস্ট এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। কমিউনিটির ব্যবহারে সহজ এমন ০৬টি রেডি টু ইউজ সলিউশানও প্রকাশ হয় এ ক্যাম্প থেকে। সম্মিলনীর প্রথম ও শেষ দিন উপস্থিত ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার গবেষণা ও প্রযুক্তি মন্ত্রী কুসমেয়েন্ট কেডিম্যান। মন্ত্রী জানান, ইন্দোনেশিয়ার স্কুলসমূহে কম্পিউটার শিক্ষার জন্য বর্তমানে ওপেন সোর্স সফটওয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। মাইক্রোসফট শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়ার জন্যে নামমাত্র দামে উইন্ডোজ দিলেও সরকার সাধারণ মানুষকে উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়ার ব্যবহারের প্রতি উৎসাহ যোগাচ্ছে। তিনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির ওপর আমাদের নিজ নিজ মালিকানা তৈরি করতে হলে অবশ্যই ওপেন সোর্স সফটওয়ার ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার ৫টি মন্ত্রনালয় এবং অধিদপ্তর ওপেন সোর্স সফটওয়ারকে সমর্থন দেবার জন্য ‘ইন্দোনেশিয়া- গো ওপেন সোর্স’ প্রকল্প বান্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এপ্লিকেশান তৈরি করা হয়েছে এবং তা বর্তমানে গবেষণা ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় ব্যবহার করছে। আশা করা হচ্ছে খুব সত্বর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হবে। সম্মিলনিতে বিভিন্ন দেশের তথ্য-প্রযুক্তি ও ওপেন সোর্স সফটওয়ার সংক্রান্ত বিভিন্ন দেশের সফল কেসস্টাডিসমূহ উপস্থাপন করা হয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের হিসাব ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ভোক্তা ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ-সহ প্রয়োজনীয় ওপেন সোর্স সফটওয়ার সমূহ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনসমূহের জন্য ওপেন পাবলিশিং, অডিও-ভিডিও সম্পাদনা, নিরাপত্তা, উবুন্টু, ওপেন অফিসসহ প্রয়োজনীয় ওপেন সোর্স সফটওয়ার নিয়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আলোচনা হয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও-সমূহ যাতে প্রপাইটরি সফটওয়ার থেকে ওপেন সোর্স সফটওয়ারে আসতে পারে তার জন্য এ সকল সফটওয়ারের ০৬টি প্যাকেট অংশগ্রহণকারীদের প্রদান করা হয়।সম্মিলনীর স্থানীয় আয়োজক ‘আইসিটি ওয়াচে’র নির্বাহী পরিচালক বোনা সিম্যানজুনটাক বলেন, প্রপাইটরি সফটওয়ার থেকে ওপেন সোর্স সফটওয়ারে কিছু পার্থক্য রয়েছে; এ জন্য উদ্ধুদ্বকরণের চেষ্টা করা দরকার। তিনি আরো বলেন, এখনো অনেক মানুষ ওপেন সোর্স সর্ম্পকে জানে না। তাদেরকে ভালো মত জানাতে হবে। গ্রিস থেকে সম্মিলনীতে আসা সিমন হ্যাক্সিটালি বলেন, তৃতীয় বিশ্বের যেসব দেশ ওপেন সোর্স ব্যবহার করছে তাদের অনেক বাড়তি প্রাপ্তি রয়েছে, যেমন ইন্দোনেশিয়া। এটি ব্যবহারের ফলে ব্যক্তিগত বিনিয়োগ কমিয়ে আনার পাশাপাশি কমিউনিটির সর্মথন পাওয়া যায়।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার ওপেন সোর্স ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিছু কিছু দেশের এ সকল উদ্যোগ এখনো প্রারম্ভিক অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু ওপেন সোর্স ব্যবহারের জন্য প্রায় প্রত্যেকের মাঝে এক ধরণের নীতি পরিবর্তন ও গ্রহণের তাগাদা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর মধ্যে ১. জাপান তাদের ই-গর্ভানেন্স প্রকল্পে নিরাপত্তাজনিত কারণে ওপেন সোর্স ব্যবহার করছে। একই সাথে জাপানিজ সরকার তাদের পুরো পে-রোল সিস্টেমে লিনাক্স ব্যবহার করছে। ২. মালেশিয়ার সরকার ২০০১ সাল থেকে ওপেন সোর্সকে সমর্থন দিয়ে আসছে। ২০০২ সালের এপ্রিলে মালেশিয়ার এসোসিয়েশান অব কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া ইন্ডাস্টি একটি পেপার উপস্থাপনের মাধ্যমে মালেশিয়াকে ২০০২ এপ্রিলের মধ্যে ‘অফিসিয়াল অ্যাম্বারেস ওপেন সোর্স সফটওয়ার’ অর্ন্তভুক্তির সুপারিশ করেন। একই সাথে ২০০২ সালের মালেশিয়ার সরকার ব্যয়সাশ্রয়ী ওপেন সোর্সভিত্তিক সফটওয়ার ‘কমনাস’ চালু করে। ৩. থাইল্যান্ডে ব্যাংকক পোস্ট একটি প্রবন্ধে প্রকাশ করে, থাইল্যান্ডের আইসিটি মন্ত্রনালয় ২০০৩ সালের মধ্যে সরকারের সকল সিস্টেমের ৫ শতাংশে লিনাক্স ইনস্টল করা হবে। ৪. তাইওয়ানের সরকার ২০০৩ সালে একটি ‘জাতীয় ওপেন সোর্স পরিকল্পনা’ গ্রহণ করে। পরিকল্পনা মোতবেক সরকার একটি সফটওয়ার কারখানা করবে যা ধীরে ধীরে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রপাইটরি সফটওয়ারের বদলে ওপেন সোর্স সফটওয়ার প্রতিস্থাপন করবে। তাইওয়ানের কেন্দ্রিয় কম্পিউটার সেন্টার জাতীয় শিক্ষা কাঠামোকে ওপেন সোর্স সফটওয়ারের দিকে যাবাার জন্য একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেছে। ৫. ভারতের কেন্দ্রিয় শুল্ক-কর বিভাগ তাদের ১০০০ ডেক্সটপ কম্পিউটারে লিনাক্স ব্যবহার করছে। সরকারের সুপারকম্পিউটার, দি-ড্যাক, পুরোদমে লিনাক্স ব্যবহার করছে। এছাড়াও ভারতের প্রচুর ওপেন সোর্স প্রকল্প রয়েছে। এছাড়াও জার্মানি, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, চায়না, পেরু ও ব্রাজিলে সরকারিভাবে ওপেন সোর্স ব্যবহার করছে এবং অনেকে ব্যবহারের জন্য নীতি প্রণয়ন করছে। কিন্তু ওপেন সোর্স কী ও কেন জরুরি; এটি একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। একটানা বললে ফস (ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়ার) হচ্ছে এ প্রোগ্রামে ব্যবহারকারীকে এ সফটওয়ার যে কোন কাজে ব্যবহারের জন্য স্বাধীণতা দেয়া হয়ে, একই সাথে ব্যবহারকারী এটি নিয়ে গবেষণা, উন্নয়ন এবং সফটওয়ারটির আসল অথবা রুপান্তরিত কপি বিতরণের স্বাধীণতা দেয়া হয়। ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়ারকে নানা নামে ডাকা হয়; যেমন এটি একটি মুভমেন্ট, একটি খেয়াল, একটি সংক্রামন, একটি সাম্যবাদী চক্রান্ত, এমনকি হৃদয় ও আত্মার সংযোগ। কিন্তু একটি বিষয় নজরে আসার মত, উন্নয়নশীল দেশসমূহ মুনাফামুখী সমাজ থেকে নিজেদের সম্পদকে বদল করে নেবার ক্ষেত্রে ফস একটি কার্যকর বাহন। আমাদের দেশে কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের প্রায় ৯৫.৫% (অনুমান) প্রপাইটরি সফটওয়ার ব্যবহার করে। উইন্ডোজ, অফিস, এডোবসহ বহুল ব্যবহৃত প্রায় সকল সফটওয়ারই পাইরেটেড, চোরাই। আমরা যারা এ সফটওয়ারসমূহ ব্যবহার করছি এটি এক ধরণের অপরাধ এবং আত্মগ্লানির বিষয়। কেননা আমরা চুরি করছি। কিন্তু আমাদের যারা কম্পিউটার ব্যবহার করি আমরা তারা যদি বলি আমরা আর চোরাই সফটওয়ার ব্যবহার করবো না তাহলে উইন্ডোজ ও এমএস অফিস-এর আসল কপি কেনার জন্য আমাদের প্রতি কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে অন্তত: বাড়তি আরো ৭০০ ডলার শোধ করতে হবে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪৯ হাজার টাকা। আমাদের যে সামর্থ্য তাতে আমরা ২০-২৫ হাজার টাকার মধ্যে একটি কম্পিউটার ক্রয় করছি। কিন্তু যদি আসল সফটওয়ার কিনতে হয় তাহলে আরো ৪৯ হাজার টাকা-সহ মোট ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি কম্পিউটার কিনতে হবে। যা আমাদের বেশিরভাগ কম্পিউটার ব্যবহারকারীর পক্ষে কেনা অসাধ্য হয়ে পড়বে। তাহলে কী আমরা চোরাই সফটওয়ার ব্যবহার করবো? চোরের মত থাকবে? নাকি বাড়তি টাকা দিয়ে সফটওযার কিনে বিল গেটসের পকেট তাজা করবো। ইতোমধ্যে মাইক্রোসফট বাংলাদেশে তাদের অফিস নিয়েছে। আগামিতে তারা কপি রাইট আইনের বলে পাইরেটেড সফটওয়ারসমূহ ধরবে এবং আসল সফটওয়ার কেনার জন্য আইনীভাবে বাধ্য করবে। যদি তাই হতে থাকে তাহলে প্রতি বছর সফটওয়ার বিক্রি করে বিদেশী কোম্পানিসমূহ আমাদের দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিবে। বিদেশ থেকে কম্পিউটার সরঞ্জাম করে আমরা যত টাকা খরচ করি তারচে কয়েক গুণ বেশি টাকা সফটওয়ার কেনার বদলে আমরা বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে হবে।এ থেকে বাঁচার এটাই রাস্তা, তা হচ্ছে উন্মুক্ত প্রোগ্রামিং সংকেত (ওপেন সোর্স) ব্যবহার করা। মালেশিয়া, ভারত, ইন্দোশিয়া, ফিলিপাইনের মত আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তর, এনজিও, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহে ওপেন সোর্স সফটওয়ার ব্যবহার শুরু করতে পারি। ওপেন সোর্স সফটওয়ার ব্যবহারের ফলে আমরা অনেকগুলো সুবিধা পেতে পারি। প্রথমত: প্রপাইটরি সফটওয়ার কিনতে গিয়ে আমরা বাড়তি কয়েক হাজার টাকা বিদেশী কোম্পানির হাতে তুলে দিতে হবে না। দ্বিতীয়ত: এটির প্রোগ্রামিং সংকেত উন্মুক্ত। তাই এ সফটওয়ারসমূহ চাহিদামত পরিবর্ধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করা যাবে। তৃতীয়ত: এটি ব্যবহারের ফলে চোরাই মাল ব্যবহারের যে আত্মগ্লানি তা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। চতুর্থত: ইতোমধ্যে একটি গ্র“প অপারেটিং সিস্টেম ‘উবুন্ট’র বাংলা সংস্করণ প্রকাশ করেছে। এর ফলে যাঁরা ইংরেজি জানেন না তাঁরাও বাংলায় কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারবে। তাই আমাদের দরকার রাষ্ট্রীয়ভাবেই উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়ার ব্যবহারে এবং তা উন্নয়নে উৎসাহ দেয়া এবং সমর্থন যোগানো। দেশকে আর্থিক সয়ম্ভরতা অর্জন ও দারিদ্র্যকে ইতিহাসে পরিণত করার ক্ষেত্রে এটিও অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে। আশা করি সরকার আমাদের পাশে থাকবেন এবং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

১০ কারণে ভিসতাকে না বলুন

অনেক আশার কথা শুনিয়ে ব্যাপক ঢাক-ডোল বাজিয়ে মাইক্রোসফট বাজারে এনেছিল উইন্ডোজ ভিসতা। লাখ লাখ ডলার খরচ করে করা মার্কেটিং নিশ্চয়ই আপনাকে মুগ্ধ করেছে। আপনিও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন প্রয়োজনে পিসিকে আপগ্রেড করে হলেও ভিসতা ব্যবহার করবেন বা ইতোমধ্যেই তা করে ফেলেছেন। কিন্তু সত্যিই কি আপনার ভিসতা প্রয়োজন, আবার ভিসতা যা বলছে তাই কি ঠিকঠিক কাজ করছে? অনেক তো শুনেছেন কেন ভিসতা ব্যবহার করবেন। এবার শুনুন কেন ভিসতা ব্যবহার করবেন না।এক. আপনার ভিসতা কতোটা প্রয়োজন ঃ উইন্ডোজ এক্সপি পারে না এমন কিছুই ভিসতাও পারে না। নির্দিষ্ট করে বললে এতে নতুন শুধু ডিরেক্ট এক্স ১০ যুক্ত হয়েছে এবং আধুনিক গেমের জনক জন কারমেক বলেছেন এটা সাপোর্ট করে এমন কিছু এখনো তৈরি হয়নি। তাহলে কেন ভিসতা ব্যবহার করবেন।দুই. বেশি দাম ঃ এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় অনেকেই আছেন যারা অন্ধের মতো ভিসতা ক্রয় করবেন। কিন্তু আপনার এখন এক্সপি আছে। ইন্টারনেটে লিনাক্স ফ্রি পাওয়া যায়। তাহলে শুধু শুধু দাম দিয়ে ভিসতা কেনাটা কতোটা যৌক্তিক। টাকা খরচ করার বেশি ইচ্ছা থাকলে কোন চ্যারেটিতে দান করুন।তিন. দামের তারতম্য ঃ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভিসতার দামে তারতম্য আছে। অন্তত অস্ট্রেলিয়াতে তো অবশ্যই। ভিসতা অস্ট্রেলিয়া থেকে কিনতে একশ ডলারের বেশি খরচ করতে হয়। অথচ ইন্টারনেটের মাধ্যমে এটা কিনলে এই বেশি খরচটুকু করতে হবে না।চার. হার্ডওয়্যারকে আপগ্রেডের ঝক্কি ঃ আপনার যদি পুরনো মেশিন থাকে যাতে এক্সপি চালাতেই কষ্ট হয় সেখানে ভিসতা চালাতে গেলে আপনার পুরো পিসির হার্ডওয়্যারকে আপগ্রেড করতে হবে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ের পিসিতেও ভিসতা মসৃণভাবে চালাতেও হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করতে হবে।পাঁচ. ড্রাইভার সাপোর্ট ঃ বর্তমানে ভিডিও এবং সাউন্ডের হার্ডওয়্যার সাপোর্ট বেশ করুন অবস্থায় রয়েছে। যেখানে ঘারফরধ তার ৮৮০০ এর জন্য একটি স্থায়ী ড্রাইভারের জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে এখনো ঘারফরধ-এর কোন কিছুর জন্য ঝখও-এর কোন সাপোর্ট এখনো ভিসতায় নেই। আর ক্রিয়েটিভের জনপ্রিয় ডিরেক্ট সাউন্ড বেইসড ঊঅঢ আর এখানে কাজ করবে না যা কিনা বর্তমান বাজারের সব গেমেই ব্যবহার করা হয়। ক্রিয়েটিভ বর্তমানে তাদের ঊঅঢ ড্রাইভারকে ঙঢ়বহঅখ অচও তে রূপান্তরিত করার কোডিং প্রক্রিয়ায় রয়েছে যা কিনা ভিসতা থেকে আলাদা। কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে খুব দ্রুতই এই ড্রাইভারগুলো দেখতে পাবার আশা নেই।ছয়. যেসব অ্যাপ্লিকেশন কাজ করে না ঃ ভিসতাতে অনেক অ্যাপ্লিকেশনই কাজ করে না। এই তালিকায় রয়েছে এন্ট্রি ভাইরাস, ব্যাকআপ এবং সিকিউরিটি সফটওয়্যার। উদাহরণ স্বরূপ সিমানটেক বা সপহোস এবং ইল্কের সফটওয়্যার। সিডি এবং ডিভিডি এর বার্নিং টুল নিরো-এর নতুন ভার্সন ছাড়া তা ভিসতায় চলবে না। এমন কি বেসিক ডিস্ক ম্যানেজমেন্ট এবং পার্টিশনিং টুল এখনো ভিসতায় কাজ করার উপযোগ্য হয়ে ওঠেনি। আল্লাহই জানে ভিসতা যখন মেইন স্ট্রিমে আসবে তখন যে কতো অ্যাপ্লিকেশন চলবে না।সাত. বিশাল লক্ষ্যমাত্রা ঃ ভাইরাস এবং মেলওয়্যার এর কারিগররা এখন ব্যস্ত ভিসতার ফাঁক খুঁজে বের করতে। এবং ইতোমধ্যেই কিছু ফাঁক বের হয়েছে। আর এটা পূরণ করতে মাইক্রোসফটকে অনেক সময় ব্যয় করার প্রয়োজন রয়েছে যা এক বিশাল লক্ষ্যমাত্রা।আট. ইউএসি ঃ মাইক্রোসফটের ওএস সল্যুউশনে মাল্টিইউজার বিষয়টির উপর তেমন জোর দেয়া হয় না। আপনি নিশ্চিতভাবেই তা ডিসেবল করে দিতে পারেন। কিন্তু কোন ব্যবহারকারী যদি অনুমতি ছাড়া কোন ক্ষয়ে যাওয়া অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে তবে এক্সপি দ্রুতই তা জানান দেয় কিন্তু ভিসতায় এর ইউএসি স্ক্রিন আসতে অনেক সময় দেরী করে এবং যেতেও তার একই দশা।নয়. ডিআরএম ঃ টিপিএম তৈরি করা হয়েছিল আরআইএএ এবং এমপিএএ-এর জন্য এমনকি আরো কঠিন কপি প্রোটেকশান ম্যাকানিজমের জন্য। কিন্তু ভিসতায় এই দায়িত্ব আপনার ঘাড়েই পড়ে যদিও উইন্ডোজ রাইটস্ ম্যানেজমেন্ট রয়েছে।দশ. কঠিন শর্তাবলী সম্বলিত লাইসেন্স ঃ যেকোনো কারণেই হোক মাইক্রোসফট এটা ভুলে গেছে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাদের ভোক্তাদের উন্নয়নের অংশীদার হবার কারণে, তাদের ক্ষতি করে নয়। কিন্তু ভিসতার লাইসেন্সের শর্তাবলী এতোটাই কঠোর যে তা এর ব্যবহারকারীদের যেকোনো সময় অবাঞ্চিত পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারে। যদিও বাংলাদেশের পাইরেটেড ভিস্তার জন্য এই আইনি বিষয় বলবৎ নয়!(কৃতজ্ঞতা : জুবায়ের আহমেদ ও দৈনিক ইত্তেফাক)

Saturday, May 12, 2007

সময় আম জনতার পক্ষে রায় দেয়

শেষ বিচারে রাজনীতিই একমাত্র নিয়ামক। জনগণের সকল কথা, বেদনা এমনকি জীবনাচার সবই রাজনৈতিক। একটি দারিদ্র্যমুক্ত অধিকার সংবেদনশীল বাংলাদেশ গড়তে হলে রাজনীতিতে যেমন জনঅংশগ্রহণ ও অভিগমনের আরো বেশি সুযোগ তৈরি করতে হবে সাথে সাথে রাজনৈতিকদেরও জনমুখী হতে হবে। জনঅংশগ্রহণ ও অভিগমনের মানে কিন্তু সকল নাগরিকই কোন দল বা ব্যক্তিদলের খাই না খাই (নিরঙ্কুশ) সমর্থক হবেন তা নয়। বরং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও চর্চায় জনমত ও চাহিদার প্রতিফলন থাকা এবং সম্মান দেখানো অনেক বেশি বাঞ্চনীয়। আজকালকার সময়ে অনেকে রাজনৈতিকবুদ্ধিজীবী অমুক মার্কা জিন্দাবাদ কিংবা অমুক ভাই ধন্য হোক-আমজনতার এমন শ্লোগানকে জনগণের মৌলিক দায়িত্ব ও রাজনৈতিকদের প্রতি জনসম্মান প্রদর্শনের ইঙ্গিত বলে ধারণা করেন। অবশ্যই এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটি প্রচলিত রাজনৈতিক সময়ে এক ধরণের ‘মিথ’। মনে রেখে এগুনো ভালো যে, মিথ মানে মিথ। মিথ সর্বদা সর্বকালে বাস্তবতার উল্টোপিঠে অবস্থান করে এবং সত্যকে মেনে নিতে চায় না। কিন্তু কে না জানে সত্যই যে একমাত্র বিষয়, যা মরে না। যে কোন সময়ে তা জেগে ওঠে মিথ্যাকে চুর্ণবিচুর্ণ করে। তাই সময় থাকতে সত্য বা কিছুটা সত্য কিংবা বিন্দুসত্য হলেও আমাদের চর্চার মধ্যে জায়গা করে দেয়া ভালো। অসংবেদনশীল রাজনীতি সাধারণ মানুষের চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত ও বিপদগামী করে। তাই জনগণ আমাদের ঐতিহাসিক সমাজ রাজনীতিতে কোনো অবদান রাখতে পারে না। বরং নিজেকে নিয়োজিত করে অজনকেন্দ্রিক বিপদশঙ্কুল বাণিজ্যমার্কা ও উপরতলার রাজনীতিতে। অথচ এ রাজনীতির প্রধান নিয়ামক পুঁজি এবং ক্ষমতা। এখানে জনগণ অনেক অনেক অনেক বেশি গৌণ। বরং এখানে জনকল্যাণ নয় মুনাফার কল্যাণ একমাত্র বিষয়। জনগণ এখানে নায়ক হয় না মাঝে মাঝে দেবতা তুষ্টির তরে ‘ভোগ’ হয়। পান্তা আর নুনে গড়া নিজের রক্ত দিয়ে মুনাফার দালানের গাঁথুনি শক্ত করে। তাই জনকল্যাণকর রাজনীতি চর্চার জায়গা তৈরি করতে হবে। রাজনীতির বিষয়াসয় এবং সার্বিক প্রাসঙ্গিকতায় জনগণকে বসাতে হবে কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু তা কেমন করে। আমাদের সকল রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে ? মিলিটারির বন্দুক দিয়ে ? সাদা কলারের সিভিল সোসাইটি? নাকি বিদেশ থেকে কিছু লোক আমদানি করে? কী হবে সমাধান। আমাদের সমাধান আমাদেরই বের করতে হবে। বিগত সময়ের চর্চা, সংস্কৃতি, জনদাবি এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসই সেই জিজ্ঞাসুজবাবের পথসোপান তৈরি করবে। অবশ্যই এ পথসোপান তৈরি পথেও রাজনৈতিকদের একাগ্রতা ও সততা থাকতে হবে। সরকার আসা সরকার যাওয়া, এমপি মন্ত্রী বনে যাওয়ার যে সংস্কৃতি তাকে পরিণত করেতে হবে জনস্বার্থে। জ্ঞানসমাজে আমজনতার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় না। মনে করা হয় তারা কিছু জানে না। হয়তো কতখানি জানে কতখানি জানে না তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে কিন্তু তাকে অনুপস্থি করার কার্যকারণ তৈরি করা মানে নিজের জন্য নিজে বিপদ তৈরি করা। চিকন বুদ্ধি, মোটা চাক্কা, গতরভরা চর্বি, ঝোলা ভর্তি টাকা এসব ক্ষণস্থায়ী মজা লুটে ঠিকই। কিন্তু জনদাবি এবং অবিশ্বাস একসময় এসব হাম্বড়তাকে তুলা ধুনো করে। শেষ বিচারে জনরায় তৈরি হয় তার স্ব-ব্যক্তিত্বে, এক্কেবারেই আমজনতার মত রুক্ষ হয়ে। মাটিতে মিশে যায় জনবিরোধী, ব্যবসামার্কা রাজনীতি ও সিদ্ধান্তের কাঠামো, কাঠামোর সহভাগী আর চাকুকররা। তাই সকল বিপদ মাথায় রাখা ভালো। উচিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করা। নিজে নিজের বদল করতে চাইলে তা অনেকখানি আরামের হয়। কিন্তু বিউটিশিয়ান করলে তাতে চোট লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাই রাজনৈতিক খেলোয়াড়রা অনেক বেশি অবদান রাখবেন মিথ্যামিথ্যির নবসংস্কৃতির পরিবর্তনে। নয়তো কে জানে জনগণ যদি পুঁষে ওঠে আরেকটা ৯১’র জন্ম দেয়।বিঃ দ্রঃ : আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চায় একটা মজার বিষয় যোগ হয়েছে। যে দল সরকার গঠন করে তার বাইরে যারা থাকেন তারা ‘বিরোধী দলে’র পরিবর্তে ‘বেসরকারি দল’ হয়ে যান। সরকারি দলের আচার আচরণ যে এ সুযোগ তৈরি করে তা নয়; একই সাথে বিরোধী দলও নিজেকে এমনটি ভাবতে পছন্দ করেন এবং এ সুযোগ গ্রহণ করেন। আমাদের নির্বাচণী ব্যবস্থার কারণে যে দল সরকার গঠন করে তারা ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পায় না। তার মানে ৬০ শতাংশ ভোট তিনি পান না। তাহলে আমরা যে দল সরকার গঠন করে সে দলের যেমনতর স্বচ্চতা, জবাবদিহিতা প্রত্যাশা করি একই সাথে যারা ৬০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বিরোদী দলে থাকেন তাদেরও স্বচ্চতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সময় এসেছে। সরকারি দল যেমন প্রতি বছর বছর তারা কী করেছেন কী তা করছেন তা নিয়ে জনশুনানীর ব্যবস্থা করতে পারেন। পাশাপাশি বিরোধী দলও এক বছর অন্তর অন্তর জনস্বার্থে (৬০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধি) কী করেছেন, কতখানি সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন, মানুষের অধিকার, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ রাষ্ট্রের কল্যাণে কতখানি কাজ করেছেন তার জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। বিরোধী দল মানে কেবল বিরোধীতা নয়, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলও সরকারের অংশ। তাছাড়া যে ভোটার ভোট দিয়েছে তার জন্য সে কি উপহার পেল, কতখানি নিশ্চয়তা পেল তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই তার আছে।আসুন সবাই এক সাথে গাই, আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালোবসি।

গণতন্ত্র নির্বাচন ও সাম্প্রতিক হালচাল

আমরা কেমন আছি?আমি ভালো আছি, আপনারা ভালো আছেন কিংবা আমরা সবাই ভালো আছি-এ কথাটি সত্যি করে বুকের ভেতর থেকে বের হয় কিনা আমার জানা নেই। বিলকুল আমরা ভালো নেই। বিকল সামাজিক কাঠামো আমাদের ভালো থাকতে দিচ্ছে না। সর্বত্র একটা নাজানা ‘অনিয়ন্ত্রণ’ কাজ করছে আমাদের র›েদ্ধ্র র›েদ্ধ্র্র।স¤প্রতি, বাহিরবিশ্বে মনযোগ-কাড়া কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। জর্জিয়ায় এনজিও ও সেনাবাহিনীকে সক্রিয় করে একটি সিভিল ক্যু হয়েছে; ভেনিজুয়েলায় মিনি অভ্যুত্থান করে সামাল দেয়া যায়নি, তবে আবার চেষ্টা চলছে শাভেজ সরকারকে সরানোর জন্য; আর্জেন্টিনায় বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ এর ‘ সংস্কার’ কে এগিয়ে নিতে গিয়ে জনবিক্ষোভের মুখে পালাতে হয়েছে শাসকদের; মজার বিষয় হয়েছে ব্রাজিলে, আমেরিকার নাকের আগায় বাম ও প্রগতিশীলরা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছে। একই সাথে ভারত বামফ্রন্ট জোট সবকিছুকে ছাড়িয়ে ১৯৩ আসনের মধ্যে ১৩৫ আসনে জয় লাভ করেছে। আপনারা সবাই মানবেন যে, হালে আমরা এবং আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ একটি টানটান ও গুমোট সময় পার করছি। তাই আমি বাহিরবিশ্বের ঘটনাসমূহকে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে বলে মনে করি। ইতোমধ্যে আমাদের রাজনৈতিক মহল ও অন্যরা এমনতর বিষয়াবলীর আলামত দেখতে পাচ্ছেন বলে দু’একবার বলেছেন। স্বাধীনতার ৩৫ বছরে আমরা বাস করছি। কিন্তু মুক্তি পেয়ে আমরা কেমন আছি, এটা একটা বড় প্রশ্নবোধক। বিগত ১৫ বছরে আমাদের অর্থনীতি আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। একই সাথে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৪৮ থেকে ৪২ এসেছে। এভাবে চলেলে ১৫ বছর পর আমাদের অর্থনীতির আয়তন ৬০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৪৪ বিলিয়ন ডলারে পৌছবে। এটি আশাব্যঞ্জক বলবো। এমনতর অর্থনৈতিক সমীকরণ আমাদের মনে আশা তৈরি করে। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়।ইদানিং মানুষ কথা পাড়ে, দেখ দেশ থাকে কিনা/ অমুকে দেশ বেচে দিবে/ অমুকে দেশের সব টাকা বিদেশে নিয়ে যায়। এসব কথা প্রকাশ্যে বলাবলি হয়। তার মানে দেশের সাথে যারা সম্পর্কিত ও ব্যবস্থাপনা পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন তাদের প্রতি সাধারণ মানুষ বিভিন্ন প্রশ্ন তৈরি করছে। কিন্তু কেন করে? সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি ‘ যাদের ভোট দিই তারা ভোটের আগে আমাদের থাকে আর ভোটের পরে ‘দলের লোক’ হয়ে যায়। আমাদের কথা শুনেন না। আমাদের উন্নয়ন হয় না। তাত্বিকভাবে দেখলে বোঝা যায়, মানুষ আসলে ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। হতে পারে এ ব্যবস্থার ওপর ‘জননিয়ন্ত্রণ’ থাকে না বলেই মানুষ বিগড়ে যায়। নানা প্রশ্ন তোলে। কিন্তু, আসলেই এ প্রশ্নগুলো অমূলক কীনা? রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য লাগে একটি সরকার। আর সরকার গঠন হয় রাজনৈতিক দল থেকে। এবং প্রক্রিয়াটি হচ্ছে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট। আর যে পদ্ধতি অনুসরণ করে আমদের দেশ পরিচালিত হয় তার নাম গণতন্ত্র। নেবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, গণতন্ত্রে জটিল আকাঙ্খা থাকে, যার মধ্যে নিশ্চিতভাবে নির্বাচন ্এবং নির্বাচনের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয় অর্š—ভুক্ত। এর জন্য মুক্তি ও স্বাধীনতা রক্ষা, আইনগত অধিকার মেনে নেয়া, মুক্ত আলোচনা নিশ্চিত করা এবং সংবাদপত্র ও নিরপেক্ষ মতামত পরিবেশনের নিশ্চয়তা দরকার হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখন নাগাদ সেভাবে গণতন্ত্রায়ন হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরও গণতন্ত্র চর্চা করা হয় না। রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ কমিটি গঠন হয় ওপর নেতাদের ইচ্ছামত। এত সাধারণ সদস্যদের মতামত থাকে না। এমন কি বড় দল সমূহের কোন সদস্য তালিকা নেই। আপনাদের মনে আছে, কিছুদিন আগে এ হলে একটি দলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে একজন সাংসদ টেবিলের ওপর ওঠে অন্য একজন সাংসদকে মারতে উদ্যাত হয়েছিল। আবার দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কোন সম্মেলনই হয় না। সদস্যদের বেশিরভাগই দলের গঠনতন্ত্র পড়াশোনা করেন না। দলগুলো বছরে কী পরিমাণ চাঁদা গ্রহণ করে, আয় করে এবং কি পরিমাণ কোনখাতে ব্যয় করে তার কোন হিসাব কখনো প্রকাশ করা হয় না। এতে করে অর্থনৈতিক সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। নির্বাচনকালীন সময়ে টাকাওয়ালারা দলের প্রার্থীতা কিনে। দলও তাদের মনোনয়ন দেয়। এসব হয় এক্কেবারে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। অনেক সময় দুনীতিবাজ, ঋণখেলাপি, কালোবাজারীরা দলের মনোনয়নে ভোট করে এবং সাংসদ নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা করতে হবে। ‘ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি’ তৈরি কাজ দল থেকে শুরু করতে হবে। দলগুলো তাদের প্রার্থীদের সকল তথ্য পুস্তিকাকারে প্রকাশ করেত হবে এবং তা একই সাথে ওয়েব সাইটে প্রকাশ করতে হবে। এটি জনগণকে তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়িত করবে। আর হাঁ রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। নির্বাচিত হবার পর সংসদ সদস্যগণ আর জনগণের কাছে আসেন না। তারা তাদের মত পরিকল্পনা করেন। অনেক সময় দেখা যায় স্থানীয় সরকারের বহুকাজ সংসদ সদস্যগণ করে ফেলছেন। এতে স্থানীয় সরকারের কাজ বাধাগ্রস্থ হয়। তাই স্থানীয় সরকার ও সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব সম্পর্কে আরো সুনিদিষ্ট করতে হবে। স্থানীয় উন্নয়নে এমপিদের ভূমিকা বিধান বাতিল করা খুবই জরুরি। একই সাথে এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আবার সংসদে সংসদ সদস্যদের কোন কোন বিষয়ে ভুমিকা খুবই গৌণ। তারমধ্যে একটি বাজেট। এখন নাগাদ বাজেট মূলত অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রিক। বাজেটকালীন সময়ে ও অর্থ-সম্পদ বরাদ্দের প্রশ্নে বিদ্যমান চঁনষরপ অপপড়ঁহঃং ঈড়সসরঃঃবব, ঈড়সসরঃঃবব ড়হ চঁনষরপ ঊংঃরসধঃবং ধহফ চঁনষরপ টহফবৎঃধশরহমং সহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে আরো ৩৫টি স্টান্ডিং কমিটি থাকলেও তার কোনটি কোন প্রকার ভূমিকা রাখে না। আমাদের সংসদ বিগত ১০ বছর ধরে কেবলমাত্র ডবংঃ গরহরহংঃবৎধষ মডেল অনুসরণ করে কাজ সম্পাদান করে। সংসদীং কার্যপ্রণালী ও কার্য সম্পাদান প্রক্রিয়ার কাঠামো আরো পুনাঙ্গ করতে হবে। লাগাতার সংসদ বর্জন সংসদকে অকার্যকর ও দুর্বল করে তুলছে। অবশ্যই এসব গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক দিক নয়। দলের টিকেটে এমপি হবার পর তিনি আর দলের বাইরে ভোট দিতে পারেন না তাতে তার সংসদ সদস্য পদ চলে যায়। নিকট অতীতে আমরা বিএনপি’র সাংসদ আবু হেনার ক্ষেত্রে তা দেখেছি। এতে ব্যক্তির স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়। এসব কারণে এমপি আর জনপ্রতিনিধি না থেকে দলের প্রতিনিধি হয়ে যান। এ পদ্ধতিও গণতন্ত্রবান্বব নয়। গণতন্ত্রের জন্য বিপরীত রীতি বদল করা বাঞ্চনীয়।রাজনৈতিক দলের বাইরেও বহুজাতিক কোম্পানি ও পুঁজিপতিরা অনেক বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের প্রতি নির্ভরতা প্রদর্শন করে। এতে করে দেশের ভেতরে একটি বিকল্প প্রশাসন তৈরি হয়। যদি নির্বাচিত সরকারের বাইরে অনেক বেশি ক্ষমতার অস্তিত্ব থাকে তাহলে বিশুদ্ধভাবে নির্বাচিত ও নীতিগতভাবে জবাবদিহিমূলক সরকার গণতন্ত্রের শর্ত পুরণ করতে পারে না। এবার আসা যাক রাজনৈতিক দলের সাথে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক কেমন হবে। রাজনৈতিক দল যা বলবে তাই কী ঠিক কিংবা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার যদি মালিক জনতাই হয় তাহলে আমজানতা এত অসহায় কেন।এ সম্পর্কের সোপান হিসেবে আমি রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারকে গুরুত্ব দিতে চাই। রাজনৈতিক দলসমূহের ইশতেহারই সাধারণ মানুষের সাথে দলের একটি সামাজিক চুক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এবং প্রত্যেকটি দল ইশতেহারকে সাজাতে হবে তেমনতর শর্তের ভিত্তিতে। আমরা যদি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামের ইশতেহার দেখি তাহলে দেখা যাবে তা অনেক বেশি মন্তব্যধর্মী, যত না তা সুপারিশধর্মী। প্রতিশ্র“তি প্রদানের ক্ষেত্রেও তা অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্খী এবং অস্পষ্ঠ। জনগণের সেবা’র জন্য তেনারা ভোটপ্রার্থী হলেও দেখা যায় তাতে সেবার কথা, কী সেবা, কত সেবা, কোথায় সেবা এ রকম সরাসরি উদ্যোগের কথা ইশতেহারসমূহে থাকে না। ইশতেহারে অবশ্যই তা উল্লেখ থাকতে হবে। এবং উল্লেখ থাকতে হবে এ ইশতেহার কিভাবে মনিটরং হবে, দল কিভাবে জনগণকে জবাবদিহি করবে। যদি দল ইশতেহার অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে জনগণ কিভাবে তার বিকল্প গ্রহণ করবে তাও ইশতেহারে উল্লেখ করতে হবে। ইশতেহারসমূহ প্রণীত হয় মূলত কেন্দ্রিয় চিন্তা নিয়ে। এতে স্থানীয় চিত্র বা প্রস্তাবনা খুবই কম থাকে। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রার্থীরা তাদের কেন্দ্রিয় ইশতেহারের স্থাণীয়করণ প্রকাশ করেতে হবে। যেখানে তিনি তা প্রস্তবনাসমূহ এবং জবাবদিহিতা কৌশলসমূহ বর্ণনা করবেন।নির্বাচন হচ্ছে সমাজে ভালো নেতাদের বাছাই ও ক্ষমতায় প্রেরণের একটি আধুনিক ব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনের দিন হবে একটি উৎসবের দিন এবং ক্ষমতা ভোগের দিন। কিন্তু আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একাধিক কথা আছে। একটি বাড়িতে যদি কোন উপলক্ষে ভোট হয় সেখানেও এখন নানা টুলস ব্যবহার করা হয়। ইলেকশান ইঞ্জেনিয়ারিং’ আমাদের এখানে হালে খুবই বলা-কওয়া একটি শব্দ। ৯০-এর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচন চলে গেছে। আমরা আশা করেছিলাম আমাদের গণতন্ত্র্র অনেক বেশি পোক্ত হয়েছে; কিন্তু কৈই?বরং আগামি নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় তেরি হয়েছে। ২২ মে রাজধানীমুখী একটি পত্রিকা খবর দিয়েছে বর্তমান ভোটার তালিকার আওতায় আগামি নির্বাচনে বেশিরভাগ রাজনৈতিক অংশগ্রহণ করবে না। তাহলে আমরা কিসের মধ্যে বসবাস করছি? দিন কয়েক আগে নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন হচ্ছে একটি পোস্টবক্স। এ কথা যদি সত্য হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন কোথায় থেকে পরিচালিত হয় তা সন্ধান করা খুবই জরুরি। কেননা বর্তমান ভোটার তালিকা যদি সঠিক হয় তাহলে দেশের নানা পরিকল্পনাও বদল করতে হবে। এবার প্রায় ১০ কোটি মানুষকে ভোটার দেখানো হয়েছে। ২০০৫ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৩ কোটি ৭০ লাখ। আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবৃদ্ধির হার ১.৪৮ শতাংশ। সে মোতাবেক ২০০৬ এর মধ্য ভাগে আমাদের জনসংখ্যা হবে ১৩ কোটি ৯০ লাখ। এ হারে ভোটার সংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লাখের বেশি হবার কথা নয়। যদি ১০ কোটি (প্রায় ৯ কোটি ১৩ লাখ) ভোটার হয় তাহলে আমাদের মোট জনসংখ্যা সে অনুপাতে প্রায় ১৬-১৭ কোটি। কিন্তু আপনারা জানেন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ যে পিআরএসপি দলিল প্রণয়ন করেছে তাতেও জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৪ কোটি। তাই আমাদের জনসংখ্যা বর্তমান ভোটার তালিকার হার মোতাবেক যদি আসলেই ১৬-১৭ কোটি হয় তাহলে আমরা পিআরএসপি অর্জন করতে পারবো না। এতে করে ২০১৫ সালের মধ্যে সারা দুনিয়া দারিদ্র্যকে অর্ধেকে নামিয়ে আনলেও আমাদের দারিদ্র্য বেড়ে যাবে। যেহেতু প্রতিবার ভোটার তালিকা করার সময় সরকারি দলের প্রতি নানা অভিযোগ ওঠে তাই বোটার হবার প্রক্রিয়াটি উন্মুক্ত রাখতে হবে। উপজেলা নির্বাচন কমিশনে পর্যাপ্ত ফরম থাকবে; কোন নাগরিক যদি মনে করে তার বয়স ১৮ বছর হয়েছে তাহলে ইউপি সনদ ও বয়স প্রমাণের সনদ নিয়ে এসে সে ভোটার হতে পারবে। প্রক্রিয়াটি হবে চলমান। ভোট প্রদান প্রক্রিয়ায় ব্যালেট পেপারে শুধুমাত্র মার্কাসমূহ দেয়া থাকে। কিন্তু ভোটদাতা যদি কাউকে ভোট না দিতে চায় তাহলে তার কোনে সুযোগ থাকে না। এ জন্য ব্যালেট পেপারে একটি ‘না’ বাচক ভোটের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যা থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশে আছ্।ে আমেরিকাতে লিখে দেবার সুযোগ রয়েছে। তা না হলে একজন ভোটাকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়; এমন কি যদি কোন প্রার্থী তার পছন্দের না হয়। একজন প্রার্থী ভোটে কতটাকা খরচ করবেন। ১৯৭২ সালের প্রবর্তিত ও ২০০১ সালে সংশোধিত জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ মোতাবেক, অন্য অনেক কিছুর মধ্যে রাজনৈতিক দলসমূহকে তাদের নির্বচিন সংক্রান্ত আয়-ব্যায়ের সকল হিসাব সঠিকভাবে নির্বাচন পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। জানামতে ২০০১ সালের নির্বাচনের অংশগ্রহণকারী একটি দলও এখন নাগাদ তাদের হিসাব জমা দেয়নি। যারা তাদের দলের আয় ব্যয়ের হিসাব ঠিক মত জমা দিতে পারেন না তারা যে ঠিক মত রাষ্ট্রের কোষাগার সংরক্ষণ করবেন ও হিসাব দেবেন তার কী নিশ্চয়তা থাকতে পারে।ভোটে এখন একজন প্রার্থী কোটি টাকা খরচ করেন কেবলমাত্র মিছিল, তোরণ নির্মাণ, আলোক সজ্জা ও প্রচারণার পেছনে। আইন করে এসব বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন প্রতি প্রার্থী থেকে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় অতিরিক্ত ৪০ হাজার টাকা বেশি নেবেন। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন নিজে কমন সভার ব্যবস্থা করবেন এবং প্রার্থীরা এসে তাদের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখবেন। এতে করে প্রার্থীদের ব্যয় ও সংঘাত কমে আসবে। তারা মুলত মানুষের ঘরে ঘরে ভোট প্রচারণা করবেন। বর্তমান সময় তথ্যপ্রযুক্তির সময়। ধীরে ধীরে বোট গ্রহণের আমাদের বিদ্যুতায়ন পদ্ধতির দিকে যেতে হবে। এতে সময় সময় সংরক্ষণ হবে, ব্যয় কমে আসবে এবং স্বচ্ছতা আসবে অনেক বেশি। রিটানিং অফিসার কর্তৃক আগে কিছু ব্যালেট সরিয়ে রেখে পরবর্তীতে ভোট গননার সময় পছন্দের মার্কার সিল মেরে ব্যালেট জমা দেবার যে রছম আমাদের চালু হয়েছে তা কমে আসবে। নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি সম্মান দেখানে যদিও গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি বছর ভোটের পর থেকে মারাত্মক সহিংসতা চলতে থাকে। এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এবং রাষ্ট্রকে নাগরিকের এ নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা মোকাবেলায় বিশেষ আইন প্রবর্তন করতে হবে। একজন মানুষ আসলে কয়টি আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হবেন, এ বিষয়টিও নির্ধারণ করতে হবে। কেননা আমাদের বড় দল সমূহের ওপরের নেতারা একজন তিন চার আসন থেকে প্রার্থীতা করেন। এ ফক্সি প্রার্থীতা বন্ধ করতে হবে। কেননা কেউ একজন তিন আসন থেকে নির্বাচিত হলে পরবর্তীতে তিনি একটি আসন রাখেন বাকি দুই আসন ছেড়ে দিতে হয়। সেসব আসনে তার দলের অন্য একজন প্রার্থীতা করেন। এ আসন ছেড়ে দেয়া মানে জনগণের বিগত ভোটের সাথে প্রতারণা করে। জাতীয় সংসদের আসন নিধারর্ণের ক্ষেত্রে ভোটার অনুপাতে আসন সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। বিগত নির্বাচনে নোয়াখালী ১ আসনে (সেনবাগ উপজেলা নিয়ে গঠিত) মোট বোটার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৮। আবার নোয়াখালী-২ আসনে (বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত) মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৩ হাজার ৭৭৫ জন। চাটখিল আসনে মোট ভোটার ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ২৩১ জন। এ পরিসংখ্যানটি ভালো করে দেখলেই প্রশ্ন তৈরি করে বেগমগঞ্জ আসনে এত ভোটার কেন? এ আসনকে অন্য দুই আসনের সাথে ভোটারের সমন্বয় করা যেত না, যদি ঔভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হতো? নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের এ বৈষম্যের কারণে কোনো দল সারাদেশে ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েও ১০০-এর কম আসন পেতে পারে। আবার মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও দেড় শতাধিক আসনে বিজয়ী হতে পারে। এ জন্য জনসংখ্যা অনুপাতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নিধারণ করতে হবে।আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০০৫ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পর্কে। সেখানে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য হলফনামার মাধ্যমে সংগ্রহ করবেন এবং তা আগ্রহী জনতার কাঝে তা প্রকাশ করবেন। এসব তথ্যের মধ্যে থাকবে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, আয়ের উৎস, প্রার্থী ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের সম্পত্তির হিসাব ও দায়ের বিবরণ, ব্যাংক ঋণের পরিমান এবং এর আগে সংসদ সদস্য হয়ে থাকলে জনগণের প্রতি তার প্রতিশ্র“তি পুরণের বিবরনী। আমি এ নির্দেশটি বাস্তবায়নের চিত্র দেখতে চাই। যদি এ নির্দেশনাটি বাস্তবায়িত হয় তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য, দক্ষ ও সংবেদনশীল নেতা বেরিয়ে আসবে। আসলেই শাসন ব্যবস্থার ওপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। একজন ভোট দিলাম তো খালাস। মেয়াদকালে তিনি আমার জন্য কোনো দায়িত্ব পালন করলেন কি করলেন না তা বলা-কওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তাই মেয়াদকালে তিনি যদি জনদায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, জনগণ যদি তাকে প্রত্যাহার করতে চায়, তাহলে তা করার বিধান তৈরি করা খুবই জরুরি। কিন্তু, এরজন্য নাগরিক সমাজ কী করতে পারি/বলে নেয়া ভালো রাষ্ট্রের সংজ্ঞা বদলেছে। এখন আর শুধু আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ নিয়ে রাষ্ট্র নয়। আধুনিক রাষ্ট্রের উপাদানের সাথে আরো তিনটি জিনিস যোগ হয়েছে। আর তা হচ্ছে বাজার, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যম। গত সময়গুলোতে আমরা যখনই ভেঙ্গে পড়েছি গণমাধ্যমসমূহ আমাদের সাহস যুগিয়েছে নানাভাবে। আজকে নাগরিক সমাজ থেকে এসব বিষয়ে আলোচনা তৈরি করছে। নাগরিক সমাজ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে সংসদ, সংসদ সদস্য, নির্বাচন ও ভোটের অধিকার সম্পর্কে মানুষ বিশেষভাবে সচেতন করা। আমার ভোট আমি দেব দেখে শুনে বুঝে দিতে হবে। আর অবশ্যই সমাজের একটি অংশকে জোর ভূমিকা নিতে হবে এ জন্য যে, সকল স্তরে যেন জননিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়। জনপ্রতিনিধিরা যেন বুঝতে পারেন শেষ বিচারে জনতাই সব। এরজন্য সকল পর্যায়ে একটি শক্তিশালী প্রেসার গ্র“প তৈরি করা জরুরি। তাহলে একটি জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ ও শক্তিশালী বাংলাদেশ তৈরি হবে।আমি প্রথমে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের কিছু উদাহরণ দিয়েছিলাম। এ বিষয়গুলোকে আমি আলাদা কিংবা বিছিন্ন মনে করছি না। দুনিয়ার সকল বিষয়াষয় এর সাথে পারষ্পরিক যোগাযোগ ও প্রেষণা থাকে। আমি বরং এ সমূহ পরিবর্তনের সাথে আমাদের কানসাট ও শনির আখড়ার একটি যোগাযোগ খোঁজার পক্ষপাতী।আমি এ বিষয়গুলোকে সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে বলতে চাই। এ সামাজিক রাজনেতিক আন্দোলন কেবলমাত্র সামাজিক কাঠামোর ব্যর্থতার ফলে তৈরি হয়। তাই আমাদের অবশ্যই রাজনৈতিক কাঠামো ও রাজনৈতিক দল সমূহের অভিগমন এবং নির্বাচন ব্যবস্থার আলোচ্য দিক সমূহ জোরদার করার প্রস্তাব করছি।অবশ্যই আমাদের সকল সমাধান হবে রাজনৈতিক। কিন্তু যদি রাজনৈতিক দল ও দলের কর্তাদের প্রতি জনঅনাগ্রহ তৈরি হয় তাহলে তা আমাদের সকলের সকলের জন্য হবে বিপদের। আসুন, আমরা একটি শক্তিশালী, সয়ম্ভর ও আদর্শিক বাংলাদেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখি।
( লেখক : একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের প্রধান)

Friday, May 11, 2007

তথ্য অধিকার বিষয়টি সামনে আনতে হবে

তাসনিমকে আটক করার পর আমাদের তথ্য অধিকার বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। অবশ্য সাংবাদিক বা তথ্যকর্মী হিসেবে তাসনিমই প্রথম না। আরো অনেকে তাদের হাতে আটক ও নিগৃহীত হয়েছেন। আমরা বোধ হয় তথ্য অধিকার বিষয়েও কথা বলতে পারি।
যেসব দেশের নাগরিকদের তথ্য পাবার অধিকার বেশি সেসব দেশ বেশি দুর্নীতিমুক্ত আর সেখানে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন বেশি শক্তিশালী। তাই সেসব দেশে মানবাধিকারও বেশি নিরাপদ। অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি তথ্য-অধিকারকে গণতন্ত্রের একটি প্রধান হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করেন। পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় সত্তরটি দেশে “তথ্য-অধিকার আইন” প্রণীত হয়েছে। আরো অনেক দেশে আইন প্রণয়নের কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। এসবের বেশিরভাগই ঘটেছে গত দু দশকে। অর্থাৎ, পৃথিবীতে গণতন্ত্রের প্রসার যত বাড়ছে তথ্য-অধিকার আইনও তত প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০০৫ সালের জুন মাসে তথ্য-অধিকার আইন প্রণীত হয়েছে প্রায় দশ বছর আন্দোলনের পর এবং অল্প সময়েই সেখানে এই আইনটি জনগণের মনে বিশেষ আগ্রহ ও আশার সঞ্চার করেছে। ভারতের স্বাধীনতার পর গত প্রায় ষাট বছরে যেসব আইন প্রণীত হয়েছে তার মধ্যে এই আইনটিই শাসনব্যবস্থায় সবচেয়ে বিপ্লবী পরিবর্তন আনতে পারে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। সামরিক-শাসিত পাকিস্তানেও তথ্য-অধিকার অধ্যাদেশ জারি হয়েছে প্রায় পাঁচ বছর হলো। শ্রীলঙ্কাও এ ব্যাপারে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাই দেখা যাচ্ছে, উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশই সবচেয়ে পিছিয়ে। তথ্য-অধিকার আইনের একটা খসড়া আমাদের আইন কমিশন ২০০২ সালেই তৈরি করেছিলেন। সেই খসড়ার ওপর মতামত দেবার জন্য তা অনেকের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তবে বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে গিয়ে অনেকদিন ফাইলবন্দী হয়ে পড়ে থাকে। ২০০৬ সনে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠান খসড়াটি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে এবং ইদানীং “মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন” কয়েকজন আইনজ্ঞকে নিয়ে আইন কমিশনের খসড়ার ভিত্তিতে আর একটি খসড়া দাঁড় করিয়েছে। আর সেটিকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাগরিক সভা হয়েছে এবং তা থেকে বেশ কিছু ভালো মতামতও এসেছে। বলা যায়, আইন তৈরির প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন বিষয়টি পরবর্তী সংসদে উত্থাপন করার ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর এ নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে অগ্রসর হতে হবে তা সংসদই ঠিক করবে। সাংসদদের সদিচ্ছা থাকলে, কিছু সময় লাগলেও, এ কাজ সম্পাদন করা কঠিন হবে না বলে আমার বিশ্বাস। খসড়া আইনের মূল বিয়য়গুলো সংক্ষেপে এই রকম ১) সংজ্ঞা : তথ্য বলতে সরকারি কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ড-সংক্রান্ত যেকোনো বস্তু বা তথ্যকে বোঝায়। সরকারি কাজে চিঠির আদান-প্রদান, মিটিংয়ের কার্যবিবরণী, ফাইলে ধরা বিভিন্ন কর্মকর্তার মতামত, স্মারক, বই, নকশা, মানচিত্র, ছবি, অঙ্কন, ফিল্ম, যন্ত্রে-ধারণ করা শব্দ ও তথ্য এবং অন্য যেকোনো তথ্যবহ বস্তুকেই তথ্য বলা যায়। ২) এই আইনের ফলে দেশে যেসব গোপনীয়তা আইন বলবৎ আছে তা হয় বিলুপ্ত হবে, নইলে তাদের সংশোধন করা হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব, দেশরক্ষা-সংক্রান্ত তথ্য, বিদেশের সঙ্গে সম্পর্ক-সংক্রান্ত তথ্য, ইত্যাদি কিছু গুরুতর বিষয় এই আইনের আওতায় পড়বে না। এ ব্যাপারে সময়সীমা নির্ধারণ করার প্রয়োজন আছে কি না তা সংসদ বিবেচনা করে দেখতে পারে।৩) প্রস্তাবিত আইনের আওতায় সরকার বলতে জনগণের পয়সায় পরিচালিত সব রকম সরকারি-আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয়, বিভাগ, কোর্ট-কাচারি, সংসদ ইত্যাদিই শুধু নয়, যেসব প্রতিষ্ঠান দেশের আইন বা অধ্যাদেশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত তারাও প্রস্তাবিত আইনের আওতায় পড়বে। দেশের বেশির ভাগ এনজিও এর মধ্যে পড়বে। ৪) তথ্য-অধিকার বলতে তথ্য-প্রাপ্তির অধিকারকে বোঝায়। সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে রক্ষিত দলিলপত্র দেখার, তার সারমর্ম, ফটোকপি, সত্যায়িত নকল ইত্যাদি পাবার অধিকার এর মধ্যে পড়বে। তবে এর জন্যে জনগণকে সামান্য কিছু ফি দিতে হবে।৫) জনগণকে এইসব তথ্য প্রদানের জন্যে প্রত্যেক সরকারি অফিসে ‘তথ্য-কর্মকর্তা’ বা ‘ইনফরমেশন অফিসার’ নির্দিষ্ট করা থাকবে। তারা জনগণের আবেদনক্রমে তাদের কাঙ্খিত তথ্য সরবরাহ করতে বা পেতে সহায়তা করবেন। না পারলে লিখিতভাবে কারণ জানাবেন, নইলে শাস্তিযোগ্য হবেন।৬) আইনের প্রয়োগ ও তদারকির জন্যে ‘তথ্য-কমিশন’ ও ‘তথ্য-আপিল কমিশন’ গঠিত হবে, যেখানে অসন্তুষ্ট আবেদনকারীরা অভিযোগ করতে পারবেন।

নিজ জেলায় উপেক্ষিত বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন

(সাংবাদিক সাইফুল্লাহ কামরুলকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশপূর্বক লেখাটি পোস্ট করছি)
ক'দিন হরেই সাংবাদিকরা আইয়ে, লে-ই লই যায়। আঙ্গো কোনো উপকার অয় ন অ-ন। দাবি তিন আন কইচ্ছি, কতদিন অইছে। কই কেও খবর অ লয় ন ( কয়দিন পরই সাংবাদিকরা আসে এবং লিখে নিয়ে যায়। আমাদের কোনো উপকার হয়নি। তিনটি দাবি করেছি, কতদিন হয়েছে। কেউ খবরও নেয়নি)। কথাগুলো এক নিমিষেই বললেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের পু্ত্র শওকত আলীর স্ত্রী। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে সেই দাবিগুলো জানতে চাইলে বললেন বাড়িতে বিদু্যতের সংযোগ, বাড়ির সংযোগ রাস্তাটি সংস্কার আর তার স্বামীর চিকিৎসা। আশ্চর্যজনক হলেও সে দাবির প্রতি কেউ কর্ণপাত করেনি। মার্চ এবং ডিসেম্বর মাস এলেই সাংবাদিকদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সোনাইমুড়ী উপজেলার বাগপাঁচরা গ্রামের বাড়িতে। সাংবাদিকদের উৎপাতে তারা অনেকটাই বিরক্ত। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য যে ৭জন বীর শ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন তাদের অন্যতম হচ্ছেন এক সময়ের বেগমগঞ্জ উপজেলা বর্তমানে সোনাইমুড়ী উপজেলার দেউটি ইউনিয়নের বাগপাঁচরা গ্রামের রুহুল আমিন। যুদ্ধের চুড়ান্ত বিজয়ে মাত্র ৬ দিন পূর্বে ১০ ডিসেম্বর খুলনার রূপসায় শাহাদাত বরণ করেন এই বীরযোদ্ধা। ১৯৩৪ সালে বাগপাঁচরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন রুহুল আমিন। ৩ভাই ও ৪ ভাই নিয়ে ছিলো তাদের সংসার। শিক্ষা জীবন শুরু করেন বাগপাঁচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার পর ভর্তি হন আমিশাপাড়া কৃষক উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৫১ সালে নৌ-বাহিনীতে নায়েক হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। যুদ্ধকালীন সময়েই অসুস্থ হয়ে মারা যান তার পিতা-আজহার মিয়া এবং তার স্ত্রী জাকিয়া খাতুন। বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের তিন মেয়ে দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মারা গেছে। তিন মেয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে ফিরোজ শাহ কলোনীতে নৌ-বাহিনীর দেয়া বাড়িতেই থাকে। এছাড়া নৌ-বাহিনীর পক্ষ থেকে গ্রামের বাড়ি বাগপাঁচড়ায় দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা দালান নির্মাণ করে দেয়া হয় ২০ বছর পূর্বে। এই বাড়িতেই স্ত্রী এবং দুই বছর বয়সের কন্যা সন্তান নিয়ে থাকে বীরশ্রেষ্ঠের পুত্র শওকত আলী। মানসিক ভারসাম্যহীন শওকত আলীর সংসার চলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত ভাতার টাকা দিয়ে। চট্টগ্রাম থেকে বড় বোন নুরজাহান নার্গিস ভাতার টাকা উত্তোলন করে তার জন্য পাঠায় প্রতিমাসে। যা দিয়েই চলে শওকত আলীর সংসার। বীরশ্রেষ্ঠের গ্রামের বাড়িতে পেঁৗছে মনে হয়েছে কোনো বিত্তশালীর পরিত্যক্ত বাড়ি এটি। চারদিকে ঝোঁপঝাড়। নৌ-বাহিনী দালানটি নির্মাণ করে দেয়ার পর আর কোনো সংস্কার হয়েছে বলে মনে হয়নি। বাড়িতে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সংক্রান্ত কোনো তথ্য সংরক্ষিত নেই। উঠানে চুলায় রান্না করছিলেন শওকত আলীর স্ত্রী। তিনি বীরশ্রেষ্ঠের বোনের মেয়ে বিধায় পরিবারের বয়োজৈষ্ঠ্যদের কাছে থেকে শোনা কিছু তথ্য জানাতে পেরেছেন। শওকত আলীকে খোঁজ করতে একজন গিয়ে তাকে দোকান থেকে ডেকে আনেন। ময়লা জামা আর লুঙ্গি পরিহিত শওকত আলীকে দেখে মনে হয়নি সে তার বাবা এই দেশকে স্বাধীন করার জন্য জীবনবাজি রেখেছিলো। সাংবাদিক পরিচয় দিতে কিছুটা বিরক্ত হলেও শেষ পর্যন্ত বলেছেন দুঃখের কথা। বললেন সাংবাদিকরা এসে তাদের স্বাক্ষাৎকার নিয়ে যায় টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হয় এবং পত্রিকার পাতায় তা প্রকাশ করা হয় বলে তিনি শুনেছেন কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের দিকে কেউ ফিরেও তাকায়নি একমাত্র নৌ-বাহিনী ছাড়া। নিজেকে কোরআন হাফেজ বলে জানালেন। পড়াশোনা কতটুকু করেছেন জিজ্ঞেস করতেই বললেন 'আন্ডার মেট্রিক'। পাগল বলে মানুষ কোনো কাজ দেয়না উপরন্তু ক্ষেপিয়ে তোলে। তখন মাথা বিগড়ে যায়। তার চিকিৎসা, বাড়ির রাস্তাটি মেরামত এবং ঘরে বিদু্যৎই তার এখন মূখ্য দাবি। বিদু্যৎ দিয়ে কি হবে প্রশ্ন করতেই স্মিত হেসে উত্তর দিলেন, বাত্তি টাত্তি জালামু আরকি। গ্রামের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী আসন থেকে স্বাধীনতা পরবতর্ীকালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন একাধিক মুক্তিযোদ্ধা, বাণিজ্য উপদেষ্টা ও যুবদল সভাপতি বরকত উল্যা বুলু ১০ বছর ধরে সংসদ সদস্য ছিলেন, পরবর্তীতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম এমপি এখানকার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন, এছাড়া এ এলাকায় রয়েছে ডজন খানেক শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি এবং আমলার বাড়ি কিন্তু রুহুল আমিনের পরিবারের দুরবস্থা নিয়ে কেউ কখনো মাথা ঘামাননি। বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনকে ঘিরে বাগপাঁচরায় ১৯৯৪ সালে নির্মিত হয়েছে বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন একাডেমি। স্থানীয়দের উদ্যোগে এ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্বয়ং নৌ-বাহিনীর তৎকালীন প্রধান রিয়ার এডমিরায় মোহাইমেনুল ইসলাম উপস্থিত থেকে ১ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। বেগমগঞ্জের চৌরাস্তায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্মৃতিস্তম্ভ। যা এখন ট্রাফিক আইল্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দশম শ্রেণীর ছাত্র জাবেদ হোসেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন একাডেমির ছাত্র হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করেন। তার মতে সারাদেশের ৭জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে তাদের এলাকায় রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের বাড়ি। এ একাডেমি হওয়ায় এলাকায় শিক্ষার হার বেড়েছে। সে নিজেও লেখাপড়া করতে পারছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করতে পারছে । বীরশ্রেষ্ঠের বাল্যকালের বন্ধু খালেক মোল্ল্লা জানলেন, অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের রুহুল আমিনসহ তিনি পড়াশোনা করেছেন বাগপাঁচরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাল্য বন্ধুদের মধ্যে তিনি বেঁচে আছেন এবং গর্ববোধ করেন একজন বীরশেষ্ঠের বন্ধু হিসেবে।

Bangladesh: release journalist blogger Tasneem Khalil

Bangladeshi blogger and journalist Tasneem Khalil has been arrested by the joint forces tonight. One of his colleagues (also a renowned blogger) broke the news requesting anonymity. They are afraid to speak out. His whereabouts are currently unknown.
Tasneem Khalil (26) is an editorial assistant of the Daily Star , a popular news daily in Bangladesh. He is also the representative of CNN and Human Rights Watch in Bangladesh. His recent articles concentrated on the extra judicial killings in Bangladesh by the joint forces and other human rights issues. After the declaration of the state of emergency in January 11, it is apparent that army is behind the Care taker (interim) Government in Bangladesh. There is an emergency act in place in the country curtailing civil rights which gives power to the authority to arrest any person without conviction. He was called in for questioning by military intelligence last week.
Human Rights Watch has later released a
statement demanding immediate release of Tasneem Khalil.