Thursday, August 16, 2007

৯/১১-র একদিন আগে

এসেই জল ছুঁয়েছি তোমার শীতলতা পাবো বলে

বাতাসে ডুবে ছিলাম ম্যালা সময়, তোমার ছোঁয়া পাবার আশায়।

এলোমেলো পায়চারি

দিনভর জটিল সব বেঁকাতেরা সমীকরণ

চা পরটা ঝিনুকের মালা

কাগজ-কলমের বিরতিহীন গড়াগড়ি, এই আর কি।

দেয়ালের ওপর কংকর ঘষে ঘষে মানবতার সন্ধান

ফের লুকিয়ে যাওয়া

আমি সৌখিন-একটু আলতা, ক্লিন সেভ

কাট কাট বাবু বিবি

রাশভারী গলা- সময়কে কিন্তু লাগাম টানতে হবে হে।

মাথামুন্ড কিচ্ছু নাই

আমার কি দোষ

আমি শুধু বলেছি- সবার মধ্যে একটা কাপুরুষ থাকে

এবং কাপুরুষমার্কা মানবদেরও ডাক নাম মানুষ।

কান্ডজ্ঞানহীন না হলে এমন করে কেউ বলে

নাকি,সত্য না হলে এমন করে কেউ ক্ষেপে।

আর হাঁ, সাগর দেখতে একবারও যাইনি

কারণ তুমি কখনোই সাগরের মত বিশাল ছিলে না।

অথচ, সাগর দেখতে তুমি এখনো ভালোবাস।

হালকাহন

একদিন সন্ধ্যে বেলা আকাশের নীলাভ দেখে
আমার পাখি হতে ইচ্ছে করেছিল।
যদি পাখি হতাম তাহলে নীল আকাশে দিনমান ঘুরে বেড়াতে পারতাম।

একদিন সাতসকালে ঠান্ডা ঝিরঝিরে বাতাস গায়ে মেখে
আমার শিশির হতে ইচ্ছে করেছিল।
যদি শিশির হতাম তাহলে ভোরের শীতল শিশির সূর্যøান করতে পারতাম
আমৃত্যূ।

আজকে আবার ভিন্ন ইচ্ছে হচ্ছে
যদি মাছি কিংবা কোনো পতঙ্গ হতাম তাহলে তোমার গালের
ভয়ংকর সুন্দর টোল’টা ছুঁয়ে দেখতে পারতাম
কিংবা
যদি পানি হতাম তাহলে তোমার আটপৌঢ়ে আসা যাওয়ায় গাল
ধুয়ে নিতে, তাতে যদি একবারও তোমার টোলের সৌন্দর্য্য
আমি পাই তাও-বা কম কিসে।

তবে বৃষ্টি হতে পারলেই ভালো হতো বেলা-অবেলায়
তোমাকে ভিজিয়ে দিতাম টোল ছুঁয়ে দেখবার অজুহাতে।

কিন্তু আমার দরিদ্রভাগ্য
আমি এর কিছু হতে পারলাম না।
তাই বলে কী তোমার আশ্চার্য্য সুন্দর টোল আমার ছুঁয়ে দেখা

হবে না। দুর ছাই, ছুঁয়ে দেখা নাই-বা হলো
তুমি হাসতে থাক আমি তোমার গালের টোল দেখি।
আর কী করব?অন্তত: ঢোক গিলতে থাকি \

প্রাথমিক স্তরে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন : সংস্কারের নামে শিশুদের মগজ ধোলাই


সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়ন ও এর গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যে দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তার মধ্যে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সংস্কার ও নবায়ন অন্যতম। কথাগুলো প্রথম শ্রেণীর বাংলা বইয়ের ভূমিকায় লেখা রয়েছে। এছাড়াও প্রাথমিক স্তরের প্রতিটি শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ের মুখবন্ধে লেখা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বয়স, মেধা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করে প্রতিটি বইয়ের বিষয়ব¯দ যেন আকর্ষণীয়, জীবন ভিত্তিক ও সমকালীন চাহিদা উপযোগী হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা হয়েছে। কিšদ বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক পাঠ করে এবং ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক অভিভাবক ও পেশাজীবীদের সাথে আলাপে দেখা যায় পাঠ্যপুস্তকের প্রারম্ভে ভূমিকা অংশের বক্তব্যের সাথে পাঠ্যসূচির অনেক অমিল রয়েছে। তাছাড়া নতুনভাবে প্রণীত পাঠ্যক্রম ছাত্রছাত্রীদের বয়স, মেধা, যোগ্যতা, আর্থ সামাজিক অবস্থার সাথে অনেক অবাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন।শিক্ষার বিষয়ব¯দকে শিক্ষার্থীর বয়স মনস্তাত্বিক বিচার, ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কের ধরণ ও অবস্থা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, ছাত্রছাত্রী প্রতিনিধি সমন্বয়ে আলোচনা সাপেক্ষে পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করলে এ সকল সমস্যার সমাধান করা অনেকাংশে সম্ভব।
পাঠ্যক্রম কী: বানদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু ননী গোপাল মজুমদার বলেন, পাঠ্যক্রম একটি পদ্ধতি জাতি গঠনের জন্যে একজন নাগরিককে কোন পর্যায়ে কতখানি জ্ঞান বা ধারণা প্রদান করবে তার যে পদ্ধতি তাই মোটা দাগে পাঠ্যক্রম নামে অভিহিত। ফলাহারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র নুসরাত জাহান রক্সী পাঠ্যক্রম বলতে বুঝে প্রত্যেক বইয়ের সূচিকে। গঙ্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মাঈন উদ্দিন বলেন, দক্ষ ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একটি জাতি গড়ে তোলাই শিক্ষার লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্যে পৌছানোর মূল সিঁড়ির নামই পাঠ্যক্রম বা পাঠ্যসূচি।
যে কারণে পাঠ্যক্রম: একটি দেশের একটি জাতির অতীত, বর্তমান, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে অবগত করেই একটি জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে হয়। আর এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের প্রধান যোগানদাতা শিক্ষা। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে পাঠ্যক্রম। একটি জাতি সম্পর্কে, বিষয় সম্পর্কে একজন ছাত্র কোন শ্রেণীতে কতখানি জানবে শিক্ষার্থীর বয়স, মনস্তাত্বিক বিচার, বিশ্লেষণ, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অবস্থান ইত্যাদি মাথায় রেখে একটি সফল পাঠ্যক্রম। তাই শিক্ষার মূল লক্ষ্যে পৌছতে পাঠ্যক্রম বাঞ্চনীয়। আর একটি সফল পাঠ্যক্রমের উপরই শিক্ষার সফলতা ব্যর্থতা নির্ভর করে বলে মন্তব্য করেন গঙ্গাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মাঈন উদ্দিন।
পাঠ্যক্রমের বর্তমান হালচাল: বানদত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি এটিএম সামছুল হক বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা অরাজকতা বিরাজমান। প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তকের ক্ষেত্রে চলছে বহুমাত্রিক ধারা। সরকার চালিত বিদ্যালয় সমূহের পাঠ্যক্রম নির্ধারণ করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যক্রম বোর্ড (এনসিটিবি), মাদ্রাসাসমূহের পাঠ্যক্রম নির্ধারণ করে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড, আবার এনজিও এবং কিন্ডার গার্টেন বিদ্যালয় সমূহের পাঠ্যক্রম প্রণীত হয় তাদের নিজস্ব ধ্যান ধারণার উপর।
প্রথম পাঠ্যক্রমের ইতিকথা: পাঠ্যক্রম প্রণয়ন একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা। প্রাথমিক স্তর থেকে বেরিয়ে একটি ছাত্রছাত্রী যত শিক্ষিতই হোক না কেন তাদের যে চেতনা, তাদের যে মূল্যবোধ তা মূলতঃ প্রাথমিক স্তর থেকে ভিত লাভ করে। আমাদের দেশে প্রথম পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে ব্রিটিশরা। বেশ কয়েকবার পাঠ্যক্রম বদল হলেও বর্তমানে আমাদের পাঠ্যক্রমের আদল কিছুটা ব্রিটিশ প্রণীত পাঠ্যক্রমের মধ্যেই রয়ে গেছে। ব্রিটিশ পাঠ্যক্রম প্রণয়নের সময় একটি বিশেষ পরিকল্পনা মাথায় রেখে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে।মিঃ ম্যাকলে নামক এক বৃটিশ নাগরিক সর্বপ্রথম পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে। বৃটিশরা চেয়েছিল আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে অফিস আদালতের কেরানী হবে এবং সে পরিকল্পনা মাথায় রেখেই মিঃ ম্যাকলে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এ পাঠ্যক্রম প্রণয়নে তারা এমনভাবে খেয়াল রেখেছিল যাতে কেউ বড় কর্মকর্তা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে না পারে এ পাঠ্যক্রম রপ্ত করে। এভাবে বৃটিশরা আমাদের দেশের নাগরিকদের শিক্ষিত করে তোলে। ঘটনার কালক্রমে বৃটিশরা আমাদের দেশ থেকে চলে যায়, তারপর পাকিস্তান শাসনামল, বর্তমানে আমরা একটি স্বাধীন দেশের মানুষ। অথচ আমাদের পাঠ্যক্রম এখনো বৃটিশ প্রণীত পাঠ্যক্রমের মাঝেই আটকে রয়েছে।
যেমন পরিবর্তিত পাঠ্যক্রম: ‘বিগত এক দশকে সার্বিক পাঠ্যক্রম বদল হয়েছে একবার’ এ কথা জানালেন ফলাহারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা লায়লা আঞ্জুমান আরা বেগম। তবে বানদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ননী গোপাল মজুমদার বলেন, প্রত্যেক বছরই একটা দুইটা করে অধ্যায় যোগ বিয়োগ হচ্ছে। এ বছর হয়ত কোন অধ্যায় সংযোজন হচ্ছে আবার দেখা গেছে অন্য বছর সে অধ্যায় বিয়োজিত হয়েছে। তবে বেশি ক্ষেত্রে সমাজ বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ের রদ বদল করা হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যে কারণে পাঠ্যক্রমের বদল: ‘আগে প্রথম শ্রেণীতে পড়ানোর জন্যে পাঠ্যক্রম প্রণয়নে শব্দানুক্রমিকভাবে করা হতো। আর বর্তমানে তা করা হচ্ছে বাক্যানুক্রমিকভাবে।’ পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের এটিও একটি কারণ বলে জানালেন বানদত্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাছাড়া সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিও বিশেষতঃ সমাজ বইয়ের দুএকটা অধ্যায় পরিবর্তনের কারণবলে তিনি জানান। তিনি আরো জানান, যে সরকার ক্ষমতায় তারা তাদের মত ইতিহাসের বিভিন্ন কথা যোগ করে। এর ফলে সে সরকার ক্ষমতায় না থাকলে অন্য সরকার তা আবার বদল করে। তবে মোদ্দাকথা হলো প্রাথমিক স্তর এখনো বৃটিশ প্রণীত পাঠ্যক্রমের ছকেই রয়ে গেছে। যা একটা যোগ বিয়োগ তা কেবল দেশের বিভিন্ন সরকারি দলের পূর্বসূরীর গুণগান বলে মন্তব্য করে কলেজ ছাত্র সোহেল।
পাঠ্যক্রম বদলের নীতিমালা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু ননী গোপাল জানান, পাঠ্যক্রম বদলের আলাদা কোন নীতিমালা নেই। এনটিসিবি’র পাঠ্যক্রম প্রণয়নে একটা কমিটি আছে, তারা বসেই রদবদল করে। এ কমিটিতে কারা থাকে জানতে চাইলে তিনি জানান, হয়ত বড় কোন আমলা বা কোন সচিব থাকে সে কমিটির প্রধান। তবে এ সকল লোকজনের অভিজ্ঞতা কিংবা যোগ্যতার চেয়ে সরকারের পছন্দসই লোককেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। ফলে কমিটির কাজ হয় সরকারের জনগণের সাথে লেজুড়যুক্ত পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করা। গঙ্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, পাঠ্যক্রম প্রণয়নে ছাত্রছাত্রীদের চাহিদা নিরুপন করতে হয়। ছাত্রছাত্রী কি চায়, কি দরকার জানতে হবে। সেজন্যে পাঠ্যক্রম প্রণয়নে প্রান্তের ছাত্র শিক্ষক থেকে কেন্দ্রের অভিজ্ঞ লোকজনের অংশগ্রহণ দরকার। আমাদের এখানে তা করা হয়না। ফলে আমাদের পাঠ্যক্রম যুথসই হয়ে উঠেনা।
বই মিছা কতা লেহে: মিলন। হাই স্কুলে পড়ে। এখন সে কম বেশি রাজনীতি বুঝে। প্রাথমিক স্তরের বই নিয়ে মিলন বলে, ‘চুতর্থ শ্রেণীর বইতে লিখেছে শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছে। কিšদ আমি এখন আমার ভাইয়ের কাছে শুনেছি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। এবং এটাই সত্যি। তাই তার ধারণা বইতে মিছা কথা লেহে।এ প্রসঙ্গে বানদত্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, আসলে বিষয়টি ভাবনার। কারণ সরকার বই বদলের সময় তাদের মত কথাবার্তা লেখে । ছাত্রছাত্রী নিচের ক্লাশ থেকে ্সবে পড়ে গেলেও উপরের ক্লাশে গিয়ে তারা অনেক বিষয় রাজনৈতিক বক্তৃতার সাথে গুলিয়ে ফেলে।তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে কি করেনি, তা সত্য কি মিথ্যে তা আমার প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলো বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত। তাই বিতর্কিত কোন কিছু ছোট ছেলেমেয়েদের শেখালে যদি তা বড়ো হয়ে জানতে পারে তাহলে শিক্ষক ও শিক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা নষ্ট হয়।
আগডুম বাগডুম:পৃথিবীর অন্যান্য দেশ তাদের শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষিত করলেও আমাদের দেশের শিশুরা অর্থহীন ছড়া পড়েই চলেছে। কলেজ পড়–য়া সোহেল বলেন, প্রত্যেক কবিতা গল্পেই একটা অর্থ থাকে এবং সে অর্থ উপস্থাপন করাই কবিতা বা গল্পের উদ্দেশ্য। বর্তমানে অনেক কবিতা ছড়ারই কোন অর্থ নেই। এ প্রসঙ্গে শিক্ষক ননী গোপাল বলেন, এসব ছড়া দিয়ে শিশুদের বা বাচ্ছাদের মুখের জড়তা কাটে এবং সহজভাবে শিশুদের শেখানোর জন্যেই এসব ছড়া পড়ানো হয়। আগডুম বাগডুম, হাট টিমা টিম টিম কিংবা রং মেখে সং সেজেসহ বেশ কিছু ছড়া আছে প্রাথমিক স্তরের বিভিন্ন বইতে। সে সকল ছড়ার মধ্যে শেখার কিছুই নেই। কলেজ পড়–য়া সোহেল বলেন, আসলে স্কুলে ছেলেরা কিছু পড়তে হবে তাই এসব ছড়া। এ সকল পড়ায় কোন অর্থ থাক বা না থাক তাতে কি, পড়া হলেই তো হলো এ ধারণা নিয়ে বোধহয় পাঠ্যক্রম প্রণেতারা পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে।
এ বছরে ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা: থানা শিক্ষা অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান বছরে প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৮টি বই পরিবর্তন হচ্ছে। এ বছর প্রায় নতুনভাবে ৮ কোটি বই ছাপানোর কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে পাঠ্যক্রম বদলের কারণে ২ থেকে আড়াই কোটি বই নতুনভাবে ছাপাতে হচ্ছে। এতে করে সরকার প্রতি বছর প্রচুর টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। নতুনভাবে ছাপানো পরিবর্তিত বইয়ের দাম হিসেব করলে প্রায় (যদি একটা বইয়ের দাম ১৫ টাকা করে ধরা হয়) ৫০ কোটি টাকার মত দাঁড়ায়। এতো গেল সরকারি গচ্ছার হিসেব, বেসরকারিভাবে যে সকল বিদ্যালয়, কেজি স্কুল, এনসিটিবি’র সাথে চুক্তি করে তারা ডিলারদের থেকে বই কিনে নিতে হয়।কান্দিরপাড় গ্রামের এনায়েত উল্যাহ বলেন, বেসরকারিভাবে যারা পড়াশুনা করছে বই বদলের ফলে তাদের সবেচেয় বেশি আর্থিক ক্ষতির মোকাবেলা করতে হয়। তিনি বলেন, এক সময় দেখা যেতো আমরা একসেট বই দিয়ে দুই/তিন বছর পর্যায়ক্রমে পড়তে পারতাম। কিšদ বর্তমানে প্রতিবছর বই বদলের ফলে নতুনভাবে প্রতিবছর বই কিনতে হয়। এতে করে অভিভাবকদের যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তেমনি শিক্ষকরাও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।নরোত্তমপুর ইউনিয়নের মনির আহম্মদ বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বর্তমানে ইপিআই, শুমারীসহ নানা কাজে জড়িত থাকায় তারা প্রায়শই ঠিকমত কাজে মনোযোগ দিতে পারেনা। এতে করে অভিভাবকরা ছেলেদের জন্যে নোটবই কিনে দেয়। যদিও তা বেআইনী। কিšদ আমাদের সমস্যা হলো, ২/৩শ টাকা দিয়ে নোট বই কেনার পর দেখা যায়, ছেলেমেয়েদের ১ বছর পড়ার পর তা আর কেউ কিনে নেয় না বা পরবর্তীতে কেউ পড়ে না। কারণ সরকারি বই বদল হওয়ার পর তা আর নোট বইয়ের সাথে মিলেনা। এতে করে প্রতি বছর গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের অনেক টাকা নষ্ট করতে হয়।
যা লেখে তাই পড়াই: বানদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লুলু বিলকিছ বানু বলেন, বিগত ১০ বছরে অন্তত বই বদল হয়েছে তিনবার। তিনি বলেন,আগেরকার সময় দেখা যেতো যে শিক্ষক যে বিষয়ে পড়াতেন তিনি সে বিষয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ের সাথে খুব পরিচিত হয়ে উঠতেন এবং ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানে স্বকীয় একটা স্টাইল গড়ে তুলতেন। কিšদ বর্তমানে তা হয়ে উঠে না। তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারি চাকুরী করি যা, লেখা তাই পড়াই কিšদ আমাদের তো দায়বদ্ধতা আছে। গত দশ বছরে বাংলা এবং সমাজ বইয়ের কয়েকটি অধ্যায় নানাভাবে পড়াতে হয়েছে। যা সত্যি দুঃখজনক।

ক্ষুদ্র পেশাজীবিরা পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে পিছিয়ে পড়ছে

ক্ষুদ্র পেশাজীবিরা হারিয়ে যাচ্ছে সমাজ থেকে। তাদের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা আর আগের মত নেই। এর অনেক কারণ রয়েছে। উপকরণের অভাবসহ আর্থিক সংকট ও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না হওয়ায় ক্ষুদ্র পেশাজীবিরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এখনো চড়াই উৎরাই পেরিয়ে টিকে আছে এমন কয়েকটি ক্ষুদ্র পেশাজীবি হলো শিশাগর, ওঝা, কামার ও কুমার। তাদের জীবনালেখ্য থেকেই অনুমান করা যাবে কেমন চলছে তাদের রোজকার জীবনযাত্রা।
শিশাগর: পুরনো ও ভাঙা কাঁচের শিশি বোতল এবং হারিকেনের চিমনি কিনে বিশেষ কায়দায় নতুন করে ওষুধের বোতল, নল ও নলের আগা এবং হোমিওপ্যাথিক ওষুধ রাখার শিশি তৈরির কাজ করতো এ শ্রেণীর ক্ষুদ্র পেশাজীবিরা। এ শ্রেণীর পেশাজীবিদের বলা হয় শিশাগর।সারাদিন গ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে এবং বাড়ি বাড়ি ঘুরে তারা ভাঙা কাঁচ সংগ্রহ করত। তারপর সেই সকল কাঁচকে গলিয়ে তারা ফুঁ দিয়ে কাঁচের জিনিসের আকার দেন। সোনাইমুড়ী থানার কৌশল্যার বাগ গ্রামের আবুল কাশেম শিশাগরের কাজ করেন। কার্যপ্রণালী সম্পর্কে তিনি জানান, তারা লোহার একটি নলের মাথার গলানো কাঁচ নিয়ে তাতে বারবার ফুঁ দিয়ে ও বারবার ঘুরিয়ে ইচ্ছামত বিভিন্ন ধরণের জিনিস বানাত। কাজের সময় ডান হাতে একটি লোহার চিমটি ধরে আর বা হাতে লোহার নল ধরে এরা জিনিসের নানান আকৃতি দেন। দেশের অর্থনীতিতে শিশাগরদের একটি বিরাট ভূমিকা আছে। কাঁচের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস পত্রাদি দিয়ে আবার জিনিস তৈরি করে। তাদের এ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত করা হয় ভাঙা কাঁচ। ফলে নগদ টাকা দিয়ে কোন কাঁচামাল কিনতে হয় না। কাঁচামাল তৈরিতেও আবার অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় না। যার ফলে অকার্যকর কোন জিনিস যেমন কাজে লাগে তেমনি শ্রমকে পুঁজি করে তারা আবার নতুন পণ্য তৈরি করে। শিশাগরদের তৈরি জিনিসপত্রও অবশ্যই ভঙ্গুর এবং বাতাসের বুদবুদ ভরা থাকে। বিভিন্ন পূজা-পার্বনে এক সময় শিশাগরদের ব্যস্ত থাকতে হবে বলে জানান কৌশল্যার বাগের আবুল কাশেম। তিনি বলেন, আমাদের বানানো শিশি কিংবা বাতির নির্মাণ সব সময় ধনী লোকদের ঘরেই শো-পিচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিšদ আধুনিক সময়ে নানারকম অটোমেটিক মেশিনে তৈরি জিনিসের সাথে তাল না মিলাতে পেরে অনেকেই বর্তমানে এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করছে। তাছাড়া কারো কারো এ পেশায় থাকার চিন্তা ভাবনা থাকলেও সরকারিভাবে এ সকল জিনিস পত্রাদি বানানোর আধুনিক কোন নিয়ম কানুন প্রশিক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এ পেশার বিলুপ্তি ঘটছে।
ওঝা: ‘ওঝা’ মানে পেট। এক সময় ওঝা পেশায় নিযুক্তরা প্রথমেই মানুষের পেট পরীক্ষা করত বলে কালেভদ্রে তাদের পেশাই হয়ে যায় ওঝা। এ পেশা বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায়। গ্রামাঞ্চলে দেখা যায়, ওঝাদের চিকিৎসা পদ্ধতি একেজনের একেক রকম। হয়ত একজন ওঝা কোন গাছের শেকড় দিয়ে সাপকে বশীভূত করতে পারেন। অথবা সাপেকাটা রোগীর চিকিৎসা করাতে পারেন। আবার অন্য আরেক জনের কাছে হয়ত মাথাব্যাথা সারাবার কোন টোটকা ওষুধ থাকে। আবার কোন কোন ওঝা আছে যারা তাবিজ বা ধন্বন্তরি কবচ দেয় যাতে দুনিয়ার তাবত বালামুসিবত দূর হয়। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা এবং আধুনিকতার ফলে এ পেশাটি একদম বিলুপ্তির পথে। ওঝা পেশায় কাজ করে ছাদুল্লাপুর গ্রামের নুরুল হক বলেন, এক সময় ওঝাদের অনেক চাহিদা থাকলেও বর্তমানে তা নেই। এখন সাধারণতঃ কারো ঘর বাড়িতে সাপ দেখা গেলে তা ধরার জন্যে অনেকে আমাদের ডাকেন। তাতে ৫০/১০০ টাকা আয় হয়। এছাড়া তেমন আর কোন কাজ নেই। কেহ কেহ কয়েকটি সাপ নিয়ে বাজারে বাজারে খেলা দেখিয়ে পরে নানারকম তাবিজ কবজ কিংবা ওষুধ বিক্রি করলেও আমি তা করিনা।মাসে এ কাজে সর্বোচ্চ ৩০০/৪০০ টাকা আয়। এ আয়ে কোনভাবে সংসার চালানো সম্ভব হয়না। তাই নুরুল হক এ পেশা থেকে প্রায় সরেই গেছে। তিনি এখন এ পেশার বদলে কৃষিকাজে জড়িত। বৈজ্ঞানিকযুক্তির সাথে এ পেশার তেমন মিল না থাকলেও এ পেশাটি আমাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ। কিšদ বর্তমান সময়ের চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে এ পেশাটি প্রায় বিলুপ্তির পথে।
কামার: যারা লোহা দিয়ে নানা উপকরণ তৈরি করে তাদের কামার কিংবা কর্মকার বলা হয়। কোদাল, নিড়ানি, দা, বটি, কুড়াল, শাবল, ছুরি, লাঙ্গলের ফলা, কাঁচি ইত্যাদি তৈরী করাই মূলতঃ কামারের কাজ । লোহা ও কয়লা হলো কামারদের কাজের মূল উপকরণ। কালামুন্সি বাজারের কামারের কাজ করে বাবুল। আলাপে তিনি জানান, লোহাকে কয়লার আগুনে পুড়িয়ে ছোট বড় হাতুড়ি, নেহাই, চিমটা, চামড়ার হাপর, পানি ইত্যাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন জিনিসের আকার দেয়। বাবুল বলেন, আমরা কয়লার আগুনে লোহাকে গরম করে তা পিটিয়ে পিটিয়ে নানা দ্রব্য তৈরি করি। চামড়ার হাপারে দড়ি বাধা থাকা, সেই দড়ি একহাতে টেনে আগুনের উত্তাপে লোহাকে গরম করে। লোহা লাল হয়ে গেলে তা কাঠের গুড়ি অথবা লোহা দিয়ে তৈরি একটি শক্ত জিনিসের উপর রেখে পিটিয়ে পিটিয়ে লোহাখন্ডকে প্রয়োজন মাফিক দ্রব্যের আকারে ধারণ করাই। তারপর তা তৈরী হলে পানিতে ফেলে দেই ঠান্ডা হওয়ার জন্যে। এভাবে যে কোন জিনিস তৈরী হয়।
কুমার: মাটি দিয়ে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী সমূহ যারা তৈরি করে তারাই কুমার। এ পেশাটি কেবল আমাদের দেশেরই পেশা নয়। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায়, মিশরে, সিন্ধু নদীর তীরবর্তী এলাকায়, চীন পারস্য, এশিয়া মাইনরের নানা স্থানে, প্রাচীন গ্রীসে, ইটালীতে মৃৎশিল্পের নিদর্শন প্রত্মতাত্ত্বিকরা উদ্ধার করেছেন। বাংলাদেশে মূলত হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন একাজ করে থাকে। উপাধিতে তারা পাল। কুমার মাটি দিয়ে নানা উপকরণ তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে।উৎপাদিত জিনিসের মধ্যে কুমাররা মূলত মাটি দিয়ে গৃহস্থলী কাজে নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য যেমন রান্নার হাড়ি পাতিল, ঢাকনা, পিঠার হাড়ি, কলস, ঘরা, গামলা, গ্লাস, হুক্কা, ধুপদানী ইত্যাদি তৈরি করে। এছাড়া রকমারী দ্রব্য ফুলের টব, পয়সা জমানোর মাটির ব্যাংক, নানা ধরনের ফলমূল, জীবজšদর প্রতিকৃতি, মাটির মটকা ইত্যাদি তৈরি করে। হিন্দুদের দেবদেবীর মূর্তিও তৈরি করে কোন কোন কুমার।মৃৎশিল্পের প্রধান উপকরণ মাটি। এ মাটির নাম এঁটেল মাটি। চাপরাশির হাট ইউনিয়নের ইন্দ্রপুর গ্রামের মনা চন্দ্র পাল বলেন, কুমিল্লা জেলার বিজয়পুরে ইটের মাটি, ঢাকা রায়ের বাজারে রাঙ্গামাটি, জামালপুর জেলার বজরার বালিমাটি, ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ার লাছামাটি এ কাজে ব্যবহৃত হয়। কাজের সময় তারা এ মাটির সাথে সমপরিমাণে বেলেমাটি মিশিয়ে দোঁআশ মাটি তৈরি করে। তারপর তা দিয়ে মন্ড তৈরি করে চাকার সাহায্যে পাত্রের আকৃতি দেওয়া হয়। দ্রব্য তৈরির জন্যে প্রথমে লাঠি দিয়ে ঘুরিয়ে চাকার বানানো হয়। খুব দ্রুত গতিতে চাকাটি যখন ঘুরতে থাকে তখন গোল করে মাটির বুটিটি ঠিক মাঝখানে রেখে কুমাররা আঙ্গুলের সাহায্যে ইচ্ছামত পাত্র তৈরি করে। একত্রে কয়েকটি পাত্র তৈরি করার মতো মাটি তারা চাকা উপর তোলে। একটি পাত্র তৈরি শেষ হলে চিকন একটি সুতা দিয়ে মাটির নীচের অংশ চাকার থেকে কেটে দেওয়া হয়। এরপর প্রয়োজন মোতাবেক পাত্রের গায়ে নকশা করা হয়। নকশা শেষ হলে তা কমপক্ষে ৮/১০ ঘন্টা শুকাতে দেওয়া হয়। তারপর তা শক্ত হলে খয়ের, কাপড়কাঁচার সোডা ও লালমাটি বা গাছের ছাল দিয়ে প্র¯দতকৃত রং তাতে লাগানো হয়। শেষ পর্যায়ে বিশেষভাবে তৈরি একটি চুলোতে সরিবদ্ধভাবে মাটির পাত্রগুলোকে বসিয়ে সেগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হয়। এভাবেই কুমাররা মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস পত্রাদি তৈরি করে।
আর্থ-সামাজিক অবস্থা: কামার, কুমারদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এক সময় খুবই ভাল ছিল। তাদের উৎপাদিত পণ্যের একদা খুব চাহিদা ছিল, তারা দ্রব্য সামগ্রীর দামও পেত প্রচুর। প্রত্যেক গ্রামে এ সকল পেশার দু’একটি পরিবারে পাওয়া যেতো। কিšদ বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমে আসছে। ক্রমশঃ এ শ্রেণীর বিলুপ্তি ঘটছে। কেহ কেহ অন্য পেশায় চলে গেছে আবার ভারতেও চলে গেছে অনেক পরিবার। একদা কামারের ছেলে কামার, কুমারের ছেলে কুমার হবে এ ধারণা করা হলেও এখন তা হয় না। এখন তারা লেখাপড়া শিখে অন্যান্য পেশায় যাচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি দেশে এসেছে। কাঁচি দা ইত্যাদি তারা লাভে বিক্রি করতে পারে না। কাসা, তামা, কাঁচ, ষ্টিল, এলুমিনিয়াম, প্লাষ্টিক, ম্যালামাইন, ত্রিষ্টাল ইত্যাদি দেশে আমদানীর ফলে মাটির জিনিসের কদরও কমে গেছে। মানুষ স্বল্পমূল্যে দীর্ঘস্থায়ী, চাকচিক্যের জন্যে সে সকল দ্রব্য কিনছে। ফলে কামার কুমারদের উৎপাদিত জিনিসপত্র এতটা বিক্রি হচ্ছে না। তবুও দুএকজন যারা এখনো এসব পেশায় নিয়োজিত আছে তারা খুব কষ্টেই দিনাতিপাত করছে। আর অনেকেই এ পেশা ত্যাগ করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। প্রতিটি গ্রামে দ্এুকজন করে এ সকল পেশাজীবি দেখা গেলেও এখন আর নেই। এখন ১০ গ্রাম খুঁজে একজন কামার কিংবা কুমার পাওয়া যায়। প্রায় সকলে পাড়ি জমাচ্ছে শহরে, পেশার বদলে জীবন যাপনের তাগিদে।
পেশা হিসেবে কামার: নোয়াখালী সদর থানাধীন সোন্দলপুুর গ্রামে এক সময় অনেক কামার থাকলেও এখন হাতে গোনা কয়েকজন মাত্র কামার আছেন। আবদুল্লাহ মিয়ার হাট বাজারে কামারের কাজ করে প্রিয়লাল কর্মকারের সাথে আলাপে জানা যায়। এ কাজের জন্যে তাদের কয়লা সংগ্রহ করতে ফেনী যেতে হয়। চড়া দামে পোড়ানো কয়লা কিনে আনতে হয়। লোহার জন্যেও চট্টগ্রাম অথবা অন্য কোন জায়গায় যেতে হয়। স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল পাওয়া যায়না। তাই কাঁচামালের সাথে সঙ্গতি রেখে তারা যখন তাদের দ্রব্যাদি বিক্রি করতে চায় তখন অনেকে তা না কিনে ষ্টিলের জিনিস কিনে। তা যেমন সাশ্রয় তেমনি চাকচিক্যও বটে। কামাররা কাজ শিখে তাদের পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে। তাদের কোন প্রশিক্ষণ যেমন নেই তেমনি নেই কোন পৃষ্ঠপোষকতা। অভাব তাদের সাথে সাথে থাকে। তাই তাদের প্রায় ঋণগ্রস্থ হতে হয়। কিšদ তা শোধ করতে তাদের প্রাণান্তকর অবস্থা। অথচ সরকারি বা বেসরকারি কোন উদ্যোগ তাদের জন্যে নেই। জীবনের ঝুকিও রয়েছে প্রচুর। বাবুল কর্মকার ও প্রিয়লাল কর্মকার জানান, তাদের অনেকেই আর এ পেশায় থাকছে না। পেশা হিসেবে কুমারদেরও একই সমস্যা। নোয়াখালী সদর থানার পূর্বাঞ্চলে তেমন কোন কুমার নেই। দু’একজন যারা আছে তাদের পূর্ব পুরুষরা এ পেশায় ছিল। কিšদ তারা এখন নেই। না থাকার কারণ সম্পর্কে মনা পাল জানান, কুমারদের কাঁচামাল সংকট রয়েছে প্রচুর। এছাড়াও লোকজন বিকল্প দ্রব্যের ব্যবহার বাড়িয়েছে। তারা তাদের উৎপাদিত দ্রব্যাদির সঠিক দাম পাচ্ছে না। এ সকল কারণে তারা সর্বদা এক পেশায় না থেকে দ্বিতীয় আরো একটি পেশায় থাকছে। ফলে দুটি পেশায় লাভ চিন্তা করে অনেকে এ পেশাকে অলাভজনক ভেবে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। এ পেশার রয়েছে ঝুকি। উৎপাদন খরচ আর বিপণন মূল্য দুটো তুলনামূলকভাবে সামঞ্জস্য হচ্ছে না বলে প্রায়ই তারা ঋণ নিচ্ছে। আর জড়াচ্ছে ঋণের দুষ্টজালে। তাদের জন্যে ভালভাবে সরকারি বেসরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। তাই অনেকে এ পেশায় আর থাকতে চাইছে না। এছাড়াও বর্তমানে কিছু কিছু সংস্থা তাদের থেকে বিভিন্ন জিনিস কিনে নিয়ে বিদেশীদের কাছে বিক্রি করছে। তারা সে সকল দ্রব্যের দাম পাচ্ছে কম। অন্যদিকে সংস্থাগুলো দাম কুড়াচ্ছে। তাদের জন্যে উৎপাদিত দ্রব্যাদির আলাদা কোন বাজার নেই।
সুপারিশ: - ক্ষুদ্র পেশাজীবিদের উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রীর বাজার সৃষ্টি করা যেতে পারে।- সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে।- ক্ষুদ্র পেশাজীবিদের দ্রব্য সামগ্রী বিদেশে রপ্তানীর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।- সরকারিভাবে সহজশর্তে ঋণ ও কাঁচামালের যোগান দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।- পেশা হিসেবে ক্ষুদ্র পেশাজীবিদের যে কোন পেশাকে মূল্যায়ন করতে হবে।