Sunday, July 15, 2007

জলের যন্ত্রনা থেকে ৪০ বছরেও মুক্তি পায়নি নোয়াখালীবাসী

দীর্ঘ ৪০ বছরেও জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায়নি নোয়াখালীবাসী । খাল দখল, খাল ভরাট, মাছ চাষের জন্য খালে বাঁধ তৈরি, খাল পরিষ্কার না করা, যত্রতত্র বেয়াল জাল পাতা, সরকারি সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, যথেচ্ছভাবে স্লুইস গেট নিয়ন্ত্রণ করাসহ প্রভৃতি কারণে নোয়াখালীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা আরো প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জলাবদ্ধতার কারণে জেলার প্রায় ৮৬ হাজার ৪৮৫ একর জমি বছরের নয় মাস জলমগ্ন থাকে। তাছাড়া এ সময় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়। অনেকে জলাবদ্বতার কারণে সে সময় বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে। সেই সাথে পরিবেশ- প্রতিবেশেও মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেয়। পশুসম্পদ, মৎস্যসম্পদের ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
নোয়াখালী জেলার অর্থনীতি প্রধানত কৃষি নির্ভর। কিন্তু জলাবদ্ধতা ও শুকনো মৌসুমে সেচের অভাবে বর্তমানে ফসল উৎপাদনে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ জেলায় মোট আবাদযোগ্য দুই লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমির ৮১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিই এক ফসলি। অন্যদিকে তিন ফসলি জমির পরিমাণ মাত্র ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে ৬৫ শতাংশ জমিতে পানি জমে থাকে।
সোন্দলপুরের মাঈন উদ্দিন বলেন, আগে আমরা জমি থেকে তিনটি ফসল পেতাম- আউশ ও রবি শস্য। কিন্তু এখন শুধু আমাদের ইরির চাষ করতে হয়। আউশ রোপণের সময় পানির দরকার নেই। অথচ সে সময়ও জমিতে পানি থাকে। আবার আমন চাষে জমিতে পানি লাগে কম। কিন্তু সে সময়ও জমিতে পানি থৈ থৈ করে। রবি মৌসুমেও জমি থেকে পানি শুকায় না। ফলে সে সময় রবিশস্য চাষ করা যায় না।
বড়রামদেবপুরের জাহাঙ্গীর বলেন, জমিতে হানি আটকি থাইকলে দান জন্ডিসের মতন অই যায়, দান ত অয়ই না - এ ধানের খের গরুরে দিলে গরুয়েও খায় না।
তিনি আরো জানান, কোনো কৃষক এ সময় ধান চাষ করলেও জমিতে ধান হয় না। জলাবদ্ধতার কারণে ধান ‘উরবা’ যায়। কোনো কোনো জমির ধান মরে যায়। আবার অনেক সময় ধানের গোড়া নরম হয়ে পচে যায়। এ সময় ধান গাছে গোছা আসে না বলে তিনি জানান।
নরোত্তমপুরের আবদুর রব বলেন, আগে জমির ধানে বছর যেত। এখন আর বছর যায় না। আগে যেখানে ধান পেতাম বছরে ৪০ মণ এখন সেখানে ধান আসে ১৮/২০ মণ। ফলে দেনা করে সংসার চালাচ্ছি। দেনার টাকা শোধ করতে কয়েক বছর আগে একবার জমি বেচেছি। এভাবে অনেকের জমিজমাও কমে আসছে। এলাকার মানুষ কৃষির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। মাঈন উদ্দিন বলেন, চাষাবাদ করব লাভের জন্য কিন্তু এখন চাষাবাদ করে প্রতি বছর লোকসান দিতে হয়। তিনি জানান, গত বছর তিনি ঋণ নিয়ে দুই একর জমি চাষ করে মাত্র ১৫ মণ ধান পেয়েছেন। এ জন্য এ বছর তিনি নিজে চাষ না করে জমি বর্গা দেবার কথা চিন্তা করছেন।
নোয়াখালী জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, যদি নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যায় তাহলে বছরে অন্তত দুই লাখ ১৬ হাজার ২১২ টন বেশি ধান উৎপাদন করা যেত।
অশ্বদিয়ার মফিজ মিয়া বলেন, এক সময় এ অঞ্চলে ডাল, সরিষা, মরিচ ও আলু চাষাবাদ হতো। কিন্তু এখন করা যায় না। কারণ যে সময়ে জমিতে এগুলো চাষাবাদ করা হয় সে সময়ও আমাদের এখানে জমি থেকে পানি শুকায় না।
বর্ষা মৌসুমে নোয়াখালী শহরের মানুষ কার্যত পানিবন্দি হয়ে পড়ে। আবদুর রহিম নামের একজন রিকশাচালক বলেন, হোরসবার চেয়ারম্যান কোনো এইকগা ডেইন করে না। রাস্তার লগের ডেইন হগল সাপ করে না। হিল্লায় হানি জমে। হানি জমি এইকগা রাস্তা বালা নাই। কনো রাস্তা দি রিকশা চালাইতাম হারি না। বেক বাঙা। জানা যায়, এক সময় মাইজদী শহর থেকে পানি গিয়ে পূর্বে নোয়াখালী খালে পড়তো। তাছাড়াও বক্সিমিজি পোলের কাছ থেকে ইসলামগঞ্জ হয়ে পশ্চিম ছত্তরের খাল ও মালেক খালে পানি পড়তো। কিন্তু বর্তমানে এসব খালের অনেক জায়গায় বন্ধও ছোট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।

কৃষি অধিদপ্তরের কথা
জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ও ভূমি গঠনের ক্ষেত্রে জেলার দক্ষিণাংশের জমিগুলো উচুঁ হওয়ায় নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তিনি জানান, নোয়াখালীতে মোট ৩৫ হাজার হেক্টর জমি জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত। অথচ এসব জমিতেও আমন করা যেত। নোয়াখালীতে ২০০০-২০০১ সালে চার লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হয়েছে। জেলায় খাদ্যের চাহিদা ছিল চার লাখ পাঁচ হাজার ৯৯৬ মেট্রিক টন। খাদ্য উদ্বৃত্ত ছিলো ৫০ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন।
তিনি আরো জানান, যে পরিমাণ জমি জলাবদ্ধ যদি সে জমিতে বছরে আড়াই টন করেও খাদ্য উৎপাদন হতো হবে বছরে আরো প্রায় সোয়া দুই লাখ মেট্রিক টনের বেশি খাদ্য উৎপাদন করা যেত। জলাবদ্ধতা এ অঞ্চলের কৃষকদের জন্য একটি বড় অভিশাপ। জলাবদ্ধতা বিষয়ে কৃষি বিভাগের কোনো পরিকল্পনা আছে কীনা এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের কোনো কিছুই করার নেই। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড -কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের মাঝ দিয়ে খাল করার পরিকল্পনা করেছে।

নোয়াখালী খাল জলাবদ্ধতার আসল কারণ
মেঘনার যে শাখাটি পশ্চিমের শাহবাজপুর নদী থেকে বেরিয়ে লক্ষীপুরের ভবানীগঞ্জের প্রান্তরেখা ছুঁয়ে সুধারামের দক্ষিণে ফেনী নদীর মোহনায় পড়েছে সেটি নোয়াখালী খাল। লক্ষ্মীপুরের বইবালা পয়েন্টে মেঘনার এই শাখাটির ওপরে যে বাঁধ নির্মাণ করা হয় তাতে রামগতি ও সুধারামের প্রায় পাঁচ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় চর পড়ে।
এ সময়ই ভুলুয়া নদী কার্যত ভরাট হতে থাকে এবং বর্তমানে বয়ার চরের দক্ষিণ মাথায় খালটি এসে ভরাট হয়ে যায়। ফলে পানি নামার পথও রোধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে সাগর যত দক্ষিণে সরে গেছে এ খালের তলদেশে বালি জমে জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে খাল ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। আবার খালে স্রোত না থাকায় সংযোগকারী খালগুলোও ভরাট হয়ে যায়। এতে করে নোয়াখালী খাল এখন নোয়াখালীর মানুষের দুঃখ-দুর্দশার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জলাবদ্ধতায় দুষিত পরিবেশ
নরোত্তমপুরের আবদুর রব বলেন, জমিতে যে ফলন হয় তাতে মানুষের সংসার চলে না। এখন অনেকে বাপ-দাদার পুরোনো পেশা থেকে ছিটকে পড়ছে। জমি এক ফসলি হয়ে যাবার কারণে কাজ কমে যাচ্ছে। বড়রামদেবপুরের আবুল মিয়া আগে বর্গা জমি চাষ করতো। তিনি জানান, আগে যা চাষ করতাম তাতে সংসার চলত। চাষের মৌসুম ছাড়া অন্য সময় বাইরে মজুরি দিতাম। কিন্তু এখন আর সে লাভ নেই। তাই জমি চাষ বাদ দিয়ে রিকশা চালাই। এ রকম অবস্থা অশ্বদিয়ার মোরশেদ মিয়া, বড়রামদেবপুরের হোসেন, পরশুরামের কেতু মিয়া। তারা এখন কেউ সাইকেল গ্যারেজের মালিক, কেউ স্কুলের পিয়ন, কেউ দিনমজুর হয়েছেন। ছিঁটকে পড়েছেন পূর্ব পেশা থেকে।
সদর উপজেলার খোদেদাদপুরের মফিজ মিয়া জানান, জলাবদ্ধতা শুধু ধানের ক্ষতি করে না, প্রতিবছর জলাবদ্ধতা কারণে তার চার/পাঁচটি করে সুপারি গাছ মারা যায়। আলাপকালে অনেকে বলেন, প্রতি বছর জলাবদ্ধতায় জেলার প্রায় দু হাজার নারিকেল, সুপারি ও কাঁঠাল গাছ মারা যায়।
বড়রামদেপুরের মেম্বার আহম্মদ উল্যাহ জানান, প্রতি বছর বর্ষাতে প্রতিটি মাটির রাস্তাই পানিতে ডুবে যায়। এতে করে বর্ষার শেষে আর সে সব রাস্তা ব্যবহার করা যায় না। এজন্য প্রতি বছর রাস্তাগুলো সংস্কার করতে হয়।
বড়রামদেবপুরের আবুল মিয়া বলেন, জলাবদ্ধতায় গবাদি পশু পালনেও মারাত্মক সমস্যা গো-খাদ্য পাওয়া যায় না। শুকনো খড় এখন বাজারে বেচাকেনা হলেও তা কেনার সাধ্য থাকে না। এ সময় গরু-ছাগল শুকিয়ে হাড় জিরজিরে হয়ে যায়। আবার অনেক পশু রোগাক্রান্তও হয়ে পড়ে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড
নোয়াখালীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নাজমুল হক বলেন, জলাবদ্ধতা নোয়াখালীর অন্যতম সমস্যা। জমি ব্যবস্থা, খালে পানি না যাওয়া, প্রাকৃতিকভাবে খাল বন্ধ হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা নির্মাণের কারণেই জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আওতায় সিডিএসপি-২ বৃহত্তর নোয়াখালী, চাঁদপুর, কুমিল্লাকে নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছে। পানি নির্বাহী প্রকৌশলী আরো জানান, উক্ত সমীক্ষায় সাউথ কুমিল্লা, নর্থ নোয়াখালী সেচ প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। যেহেতু এটি একটি বড় প্রকল্প তাই ভেঙে ভেঙে কাজ করতে হবে। বর্তমানে প্রকল্পে দু একটি অংশের কাজ চলছে। যদি দাতারা টাকা দেয় তাহলে কাজ করা যাবে। নইলে আবার কাজ থমকে যাবে।
জলাবদ্ধতা নিরাসনে যে সব পরিকল্পনা পানি উন্নয়ন বোর্ড গ্রহণ করেছে সেগুলো হলো:
১। বামনীতে ১৪ পোন্ডারের যে স্লুইস আছে সেটিকে ২৮ পোল্ডারে উন্নীত করে কালামুন্সি খালের পানি বামনী স্লুইস গেট দিয়ে সন্দ্বীপ চ্যানেলে ফেলা।
২। ছোট ফেনী নদী বন্ধ করে দিয়ে ছোট ফেনী নদীর পানি ও নতুন ডাকাতিয়ার পানি মুছাপুরের রেগুলেটর দিয়ে সন্দ্বীপ চ্যানেলে নির্গমণ করানো।
৩। নোয়াখালী খালের মুখের অংশ যেহেতু উঁচু হয়ে গেছে সেহেতু নোয়াখালী খালে রেগুলেটর স্থাপন করলেও কাজ করবে না। তাই নোয়াখালী খালের পানি নবগ্রামে স্লুইস নির্মাণ করে নদীতে ফেলা।
৪। এ অঞ্চলের সাথে বামনী খালের যেহেতু কোনো সংযোগ নেই তাই এ এলাকার পানি আলগি খালে ফেলে তা বামনী স্লুইস দিয়ে সন্দ্বীপ চ্যানেলে ফেলা।
৫। নতুন ডাকাতিয়ার পানি ওয়াপদা খাল দিয়ে রহমতখালীর মাধ্যমে মেঘনায় ফেলা।
বর্তমানে রহমতখালীতে স্লুইস স্থাপন, নোয়াখালী খালের নবগ্রামে স্লুইস স্থাপনও বামনীতে স্লুইস নির্মাণের কাজ চলছে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান। আগামী বছর মুছাপুর স্লুইসের কাজ হবে বলে জানান। এছাড়া যেসব কাজ রয়েছে সেগুলো অর্থের অভাবে করা যাচ্ছে না। টাকা পাওয়া গেলে সেগুলো করা হবে বলেও তিনি জানান।

জলাবদ্ধতার কারণ
খাল দখল, খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ,খাল ভরাট, খালের যত্রতত্র বেয়াল জাল ফেলার কারণেই মুলত জলাবদ্ধতা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, সোন্দলপুরের অনেক খাল জমির মালিকরা খালের পাশে যার জমি সে খালের কিছু অংশ ভরাট করে জমি বাড়িয়েছেন। ফলে খালের প্রশস্ততা কমে গেছে।
এছাড়াও জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হচ্ছে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা। এ প্রসঙ্গে বড়রামদেবপুরের মোস্তফা মিয়া বলেন, অনেকে মাছ চাষের জন্য যত্রতত্র বাঁধ দেয়। এতে করেও পানি জমে থাকে। আবার অনেকে খাল সেচে মাছ ধরার জন্যও খালে দিয়ে পানি নামতে পারে না।
আবার অনেক খালে বেয়াল জাল পেতে রাখে। ফলে খাল দিয়ে পানি চলাচল বাধা পায়। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, প্রত্যেকে এলাকায় আমাদের ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট কমিটি রয়েছে। এগুলো তারা দেখাশুনা করেন। আমরা তো আর খাল পাহারায় লোক লাগাতে পারি না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরো বলেন, আমাদের একটি বিভাগের সাথে আরেকটি বিভাগে সমন্বয় নেই এজন্যও জলাবদ্ধাতার সৃষ্টি হয়। দেখা যায় আমরা কোথাও জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করছি অন্যদিকে এলজিইডি সেখানে রাস্তা বানাচ্ছে। ফলে আবার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
সদর পূর্বাঞ্চলের অনেক খালেই দীর্ঘদিন কোনো কাজ হয়নি। সোন্দলপুরের মোস্তফা বলেন, গত বছর কালামুন্সি খালের খনন কাজ হয়েছে। কিন্তু এটা কোনো কাজ নয়।
যে মেম্বার কাজ করিয়েছে তিনি সব টাকা খেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। খাল থেকে মাটি তোলার জন্য যে পরিমাণ গম বরাদ্দ ছিল সে পরিমাণ ওজনের মাটি কাটা হয়নি। তিনি বলেন, খাল কাডে ন, খালেরে সেব করাইছে।

স্যানিটেশন
জলাবদ্ধতার কারণে রোগ-বালাই হয়ে দাঁড়িয়েছে পূর্বাঞ্চলের মানুষের প্রতিদিনের সঙ্গী। কান্দিরপাড়ের আবুল বলেন, পানি আটকা পড়লে পুকুরের পানি বিলের পানি, পায়খানার পানি সব এক হয়ে যায়। তখন সে পানি গোসলে, রান্না করতে, খাবারে সব কাজে ব্যবহার করতে হয়। ফলে অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। তিনি আরো জানান ডায়রিয়ায় প্রতি বছর তার গ্রামে ২/৩টি শিশু মারা যায়। এছাড়া প্রত্যেকেই চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়।

কেস স্টাডি
মোরশেদ মিয়ার বাড়ি অশ্বদিয়ার পূর্ব নূরপুর গ্রামে। অনেক দিন সৌদি আরবে ছিলেন। ৮ ছেলেমেয়ে আর স্বামী-স্ত্রী মিলে ১০ জনের সংসার। সৌদি আরব থেকে ফিরে শুরু করেন চাষাবাদ। বিদেশ থাকতেই প্রায় ৫ একর জমি কিনেছেন। ভালোই ফলন হচ্ছিল। একদিকে ধান অন্যদিকে আলু, মরিচ এসব চাষ করতেন। বছরে ধান আসতো ১৩০ থেকে ১৫০ মন। গোলা ভরে যেতো ধানে। সংসারের জন্য যা দরকার তা রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দিতেন। ধান বিক্রির টাকা জমিয়ে বড় মেয়ের বিয়ে দেন। হঠাৎ করে যেন আল্লাহ বিরাগ হয়ে পড়ে। তিন ফসলি জমি সব এক ফসলি হয়ে যায়। বছরের বেশি সময়ই জমিগুলো থাকে পানির নিচে। তবু চাষ করে। কিন্তু যে টাকা খরচ করে চাষ করে ফলন উঠলে সে টাকাও ওঠে আসে না। এভাবে মোরশেদ মিয়ার দিন দিন দেনা হতে থাকে। এক সময় দেনা হয়ে যায় গলা পরিমাণ। পরে দেনা শোধ করতে অনেক জমিই বেচতে হয়।
শেষে বুড়ো বয়সে এসে মোরশেদ মিয়া যেটুকু জমি আছে সেটুকুও বিক্রি করে সাইকেল গ্যারেজ দিয়েছেন। মোরশেদ মিয়া বলেন, এখন কোনো দিন ১০০ টাকা কোনোদিন আরো বেশি আয় হয়। তাতে ভালোই চলে। কিন্তু জমি চাষের টারি আর কপালে সয় না।

No comments: