Thursday, November 29, 2007

সাবমেরিন ক্যাবল কী/ কেন

সাবমেরিন ক্যাবল বা অপটিক্যাল ফাইবার হচ্ছে খুবই সূক্ষ্ম, স্বচ্ছ কাচতš', যার মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিফলনের মাধ্যমে কোন একটি প্রতিবিম্ব বা তথ্য এক প্রাš- থেকে অন্য প্রাšে- প্রেরিত হয়। সহজভাবে বলা যায়, অপটিক্যাল ফাইবার হল আলোর এক ধরনের পরিবাহক। অপটিক্যাল ফাইবারে স্বচ্ছ পদার্থের একটি পাতলা মজ্জা অপেক্ষাকৃত নিচু প্রতিসরাংকের পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে যা আচ্ছাদন হিসেবে পরিচিত। আলোক তরঙ্গসমূহ ফাইবারের পাতলা মজ্জা বরাবর মজ্জা-আচ্ছাদনে কতগুলো সম্পূর্ণ অভ্যš-রীণ ধারাবাহিক প্রতিফলন হিসেবে পরিচালিত ও পরিবাহিত হয়। মজ্জা-মধ্যস্থ অপদ্রব্যসমূহের কারণে প্রতি কিলোমিটারে প্রায় সাত শতাংশের মতো আলো ক্ষতিগ্র¯- হয়। সিলিকা-ভিত্তিক ফাইবার ব্যবহার করে এটিকে বহুলাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অপটিক্যাল ফাইবারের বহুবিধ ব্যবহারিক প্রয়োগ রয়েছে, যেমন : যোগাযোগ ব্যবস্থা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে মেডিকেল ইমেজিং ব্যবস্থা এবং শিল্পকারখানা ও শল্যচিকিৎসায় পথনির্দেশক হিসেবে ব্যবহারের জন্য উচ্চ ক্ষমতার লেজার থেকে উৎসারিত আলোককে অপটিক্যাল ফাইবারের মধ্য দিয়ে পাঠানো হয়। এটি প্রচলিত ক্যাবল অপেক্ষা দ্রুত, অধিক পরিমাণে তথ্য বহন করতে সক্ষম এবং এতে তথ্য বিকৃতিও অত্যš- কম।

উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এ এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ অপটিক্যাল ক্যাবল নেটওয়ার্কের বি¯-ৃতি ২০ হাজার কিলোমিটার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই নেটওয়ার্কে ডেনস ওয়েভলেনথ ডিভিশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১.২৮ টেরাবিট ক্যাপাসিটি পাওয়া যাবে। যার মাধ্যমে টেলিফোন, ইন্টারনেট, মাল্টিমিডিয়া ও বিভিন্ন ব্রডব্যান্ড ডাটা এপ্লিকেশনের কাজ অনেক দ্রুত সম্পাদন করা যাবে।
সিঙ্গাপুরের টুয়ার্স থেকে শুরু করে এ ক্যাবলের যাত্রা শেষ ফ্রান্সের মার্সেই শহরে পৌঁছে। এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ কনসোর্টিয়াম গড়ে উঠেছে ১৪টি দেশের অংশগ্রহণে। দেশগুলো হলÑ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকি¯-ান, শ্রীলংকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মিসর, তিউনিশিয়া, ইতালি, আলজেরিয়া এবং ফ্রান্স।
১৪টি দেশের ১৬টি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান রয়েছে এতে। পুরো নেটওয়ার্ক যেসব জায়গা থেকে সংশ্লিষ্ট দেশে যুক্ত হয়েছে কারিগরি ভাষায় তাদের বলা হচ্ছে ল্যান্ডিং স্টেশন। সমুদ্রতলে সাবমেরিন ক্যাবল বসানোর ক্ষেত্রে দু’রকম নিয়ম অনুসরণ করা হয়। যেখানে সাগরের গভীরতা ১০০ মিটার বা তার চেয়ে কম সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে স্থাপন করা হয়েছে এ ক্যাবল। ১০০ মিটারের বেশি গভীরতায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমুদ্রতলে শুধু পেতে রাখা হয়েছে এ ফাইবার অপটিক্যাল কেবল। এ কাজ সম্পন্ন করেছে জাপানের ফুজিৎসু এবং ফ্রান্সের অ্যালকাটেল কোম্পানি।

বাংলাদেশে এর প্রভাব

আশির দশকে কক্সবাজার ও ভোলার ৪০-৫০ মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরের তলদেশ দিয়ে ফাইবার অপটিক্যাল লিংক অ্যারাউন্ড দি গ্লোব নামের আš-ঃমহাদেশীয় ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছিল। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকেও এ সময় সংযোগ গ্রহণের প্র¯-াব দিয়েছিল নেটওয়ার্ক স্থাপনকারী বহুজাতিক কোম্পানিটি। কিš' রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হবেÑ এমন কারণ দেখানোর পর বাংলাদেশকে বাদ দিয়েই তথ্যপ্রযুক্তির এ মহাসড়ক ভারত, পাকি¯-ান, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে চলে যায়। বাংলাদেশ হারায় সুযোগ। পরে ১৯৯২ সালে বহুজাতিক কোম্পানি ব্যাকটেল আবারও বাংলাদেশকে সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার প্র¯-াব করলে তখনও একই ঘটনা ঘটে।
১৯৯৫ সালেও বাংলাদেশের জন্য ইনফরমেশন হাইওয়েতে প্রবেশের সুযোগ আসে। সে সময় উত্তর-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিম ইউরোপ কনসোর্টিয়াম বাংলাদেশকে সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার প্র¯-াব দেয়। ২০০১ সালের ১৬ আগস্ট টিএন্ডটি অবশেষে সাবমেরিন ক্যাবলের ওপর তাদের মূল্যায়ন রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ২০০২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪ কনসোর্টিয়ামে যোগ দেয়ার জন্য সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। মূলত বালি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৪ সালের ২৮ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম ইউরোপ (এসইএ-এমই-ডব্লিউই-৪) কনসোর্টিয়ামের সব পক্ষের মধ্যে চূড়াš- চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়।

বাংলাদেশের আক্কেল সেলামি
১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের শামসনামলে সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ার প্রথম সুযোগটি হাতছাড়া করে বাংলাদেশ। তখন সুযোগটি গ্রহণ করলে বাংলাদেশ বিনামূল্যে সাবমেরিন ক্যাবলে যুক্ত হতে পারত। আজ এ ক্যাবলে যুক্ত হতে কনসোর্টিয়ামকে ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ।

সাবমেরিন ক্যাবলের সুবিধা
সাবমেরিন ক্যাবল বা অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংযোগ পাওয়া অনেক সহজ। অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহারে খচরও অনেক কম। এছাড়া এ কনসোর্টিয়ামের সদস্যভুক্ত ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকি¯-ান, ভারতসহ ১৪টি দেশে টেলিফোন সংযোগের ক্ষেত্রে আš-ঃসংযোগের জন্য বাড়তি টাকা দিতে হয় না। এর ফলে এ দেশগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও আš-র্জাতিক ফোন কলের মূল্য তুলনামূলক কম।

নাশকতা ও অনিশ্চয়তা
সাবমেরিন ক্যাবল উদ্বোধনের আগ থেকেই একের পর এক নাশকতামূলক ঘটনার সূত্রপাত হয়। কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম পর্যš- এর অপটিক্যাল ফাইবার লিংক বারবার নাশকতার শিকার হয়। কে বা কারা আগুনে পুড়িয়ে ও কেটে অপটিক্যাল ফাইবার লিংক বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে বারবার। মুনাফালোভী একটি চক্র দেশের অভ্যš-রে এর ব্যবহার এত তাড়াতাড়ি শুরু হোক তা চায় না। হংকং থেকে কানেকশন নিয়ে বর্তমানে ব্যবসা চালানো ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের চক্রটি এর ব্যবহার বিলম্ব করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে। বারবার এর সংযোগ ক্যাবলে হানা দিচ্ছে। তাছাড়া সাবমেরিন কেবল চালু হওয়ার পর এর ব্যবহারবিধি, সংযোগসেবা, প্র¯-াবিত ব্রডব্যান্ড নীতিমালা ও এটি ব্যবহারের খরচ এখনও চূড়াš- করা হয়নি। ফলে এর সম্পূর্ণ সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।

বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে ও তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশের জন্য ইনফরমেশন সুপার হাইওয়েতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের আবশ্যকতা কতটুকু তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কতিপয় দুষ্কৃতকারীর জন্য দেশবাসী এর পূর্ণ সুফল ভোগ করতে পারছে না। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা বিবেচনা করে প্রশাসনকে সাবমেরিন ক্যাবলের দিকে বিশেষভাবে নজর দেয়া উচিত।

সামান্য পরিবর্তন ব্যতীরে, জাকির হোসেন সরকার'র লেখার অবিকল কপি


No comments: