Wednesday, November 14, 2007

সোয়াশ বছরে এ জনপদে ৮০টির বেশি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়

গত একশ পঁচিশ বছরে ৮০টিরও বেশি বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড় এ অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। মারা গেছে ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষ। ঘর ছাড়া হয়েছে আরও কয়েক লাখ মানুষ। বুধবার আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানাচ্ছেন মারুফ মল্লিক। ১৮৭৬ সাল। তখন বরিশাল ছিল বাকেরগঞ্জ। ওই বছর বাকেরগঞ্জের ওপর আঘাত করা ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটার। এটি 'গ্রেট বাকেরগঞ্জ স্টর্ম' নামে পরিচিত। উপকূলীয় এলাকা ১০ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছিল। কেউ কেউ ১৬ মিটার উচ্চতার জলো"চ্ছ্বস হয়েছিল বলেও দাবি করে থাকে । ১৮৭৬ সালের ১ নভেম্বরের ওই ঝড়ে সব মিলিয়ে ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে এক লাখ মানুষ মারা যায়। ঝড়ের পর বিভিন্ন রোগব্যাধিতে মারা যায় আরও এক লাখ। ওই সময়ের জনসংখ্যার হিসাবে এটি বড় ধরনের এক বিপর্যয়। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক সাজেদুর রহমান বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাদের দেশে মুলত এপ্রিল-মে এবং অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায় শীত ও গ্রীস্মের মাঝামাঝি সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবনতা বেশি থাকে। এর কারণ হচ্ছে এ সময় আবহাওয়া পরিবর্তন হতে থাকে।" ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর 'ভয়াল ১২ নভেম্বর' হিসাবেই পরিচিত। এদিন দক্ষিণ বাংলার বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও ভোলার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২২২ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়ের স্মৃতি কেউ ভোলেনি। উপকূলীয় এলাকা ১০ মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছিল। ওই ঝড়ে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তবে কোনো কোনো হিসাব মতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১২ লাখ। উপকূলের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল লাশের গন্ধে। জলো"চ্ছ্বসে প্লাবিত হওয়ায় অনেকের জন্যই কবরের জায়গা পাওয়া যায়নি। ১৯৮৫ সালের উড়ির চরে ঘণ্টায় ১৫৪ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়ে মারা গিয়েছিল ১১ হাজার মানুষ। এপ্রিল মাসের ২৪/২৫ তারিখে বয়ে যাওয়া ওই ঝড়ে ১৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রামসহ উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার বেগের ঘূর্ণিঝড়। ২৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে মারা গিয়েছিল ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। প্রলয়ংকরী এ ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৯৭ সালের ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম এলাকার ওপর দিয়ে ২২৪ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়। ৬ দশমিক ১ মিটার উচ্চার জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ে এ সময় মারা যায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ। এছাড়াও ১৯৬০, ১৯৬১, ১৯৬৩, ১৯৬৫, ১৯৯৪, ১৯৯৫, ১৯৯৮, ২০০৩ সালে ঘুর্ণিঝড় আঘাত হানে। এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে সবচেয়ে পুরনো ঝড়ের তথ্য পাওয়া যায় ঐতিহাসিক গ্রন্থ 'আইন ই আকবরী ' ও 'রিয়াজ-উস সালাতিন' এ। এতে বলা হয়েছে ১৫৮২ সালে এক ঝড়ে ২ লাখ মানুষ মারা যায়। ৫ ঘণ্টাব্যাপী হারিকেনের শক্তি সম্পন্ন এ ঝড়ের তাণ্ডবে বর্তমান বরিশাল ও পটুয়াখালী এলাকায় ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। কেবল শক্ত ভিতের ওপর স্থাপিত মন্দিরগুলো সে সময় টিকেছিল। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের 'নিরাপদ বার্তা ' নামে একটি প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ছোট বড় ৮৩টি ঘূর্ণিঝড় বয়ে গেছে। জানুয়ারি, ফেব্র"য়ারি, মার্চ ও জুলাই মাসে এ পর্যন্ত কোনো ঘূর্ণিঝড় হয়নি। এপ্রিল মাসে ৪টি, মে মাসে ২১টি, জুন মাসে ৯টি, আগস্ট মাসে ১টি, সেপ্টেম্বর মাসে ৬টি, অক্টোবর মাসে ২৩ টি, নভেম্বর মাসে ১৩টি এবং ডিসেম্বর মাসে ৬টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত করে ।

- মারুফ মল্লিক বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর নভেম্বর ১৪, 2007

No comments: