Saturday, May 12, 2007

সময় আম জনতার পক্ষে রায় দেয়

শেষ বিচারে রাজনীতিই একমাত্র নিয়ামক। জনগণের সকল কথা, বেদনা এমনকি জীবনাচার সবই রাজনৈতিক। একটি দারিদ্র্যমুক্ত অধিকার সংবেদনশীল বাংলাদেশ গড়তে হলে রাজনীতিতে যেমন জনঅংশগ্রহণ ও অভিগমনের আরো বেশি সুযোগ তৈরি করতে হবে সাথে সাথে রাজনৈতিকদেরও জনমুখী হতে হবে। জনঅংশগ্রহণ ও অভিগমনের মানে কিন্তু সকল নাগরিকই কোন দল বা ব্যক্তিদলের খাই না খাই (নিরঙ্কুশ) সমর্থক হবেন তা নয়। বরং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও চর্চায় জনমত ও চাহিদার প্রতিফলন থাকা এবং সম্মান দেখানো অনেক বেশি বাঞ্চনীয়। আজকালকার সময়ে অনেকে রাজনৈতিকবুদ্ধিজীবী অমুক মার্কা জিন্দাবাদ কিংবা অমুক ভাই ধন্য হোক-আমজনতার এমন শ্লোগানকে জনগণের মৌলিক দায়িত্ব ও রাজনৈতিকদের প্রতি জনসম্মান প্রদর্শনের ইঙ্গিত বলে ধারণা করেন। অবশ্যই এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এটি প্রচলিত রাজনৈতিক সময়ে এক ধরণের ‘মিথ’। মনে রেখে এগুনো ভালো যে, মিথ মানে মিথ। মিথ সর্বদা সর্বকালে বাস্তবতার উল্টোপিঠে অবস্থান করে এবং সত্যকে মেনে নিতে চায় না। কিন্তু কে না জানে সত্যই যে একমাত্র বিষয়, যা মরে না। যে কোন সময়ে তা জেগে ওঠে মিথ্যাকে চুর্ণবিচুর্ণ করে। তাই সময় থাকতে সত্য বা কিছুটা সত্য কিংবা বিন্দুসত্য হলেও আমাদের চর্চার মধ্যে জায়গা করে দেয়া ভালো। অসংবেদনশীল রাজনীতি সাধারণ মানুষের চিন্তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতাকে প্রভাবিত ও বিপদগামী করে। তাই জনগণ আমাদের ঐতিহাসিক সমাজ রাজনীতিতে কোনো অবদান রাখতে পারে না। বরং নিজেকে নিয়োজিত করে অজনকেন্দ্রিক বিপদশঙ্কুল বাণিজ্যমার্কা ও উপরতলার রাজনীতিতে। অথচ এ রাজনীতির প্রধান নিয়ামক পুঁজি এবং ক্ষমতা। এখানে জনগণ অনেক অনেক অনেক বেশি গৌণ। বরং এখানে জনকল্যাণ নয় মুনাফার কল্যাণ একমাত্র বিষয়। জনগণ এখানে নায়ক হয় না মাঝে মাঝে দেবতা তুষ্টির তরে ‘ভোগ’ হয়। পান্তা আর নুনে গড়া নিজের রক্ত দিয়ে মুনাফার দালানের গাঁথুনি শক্ত করে। তাই জনকল্যাণকর রাজনীতি চর্চার জায়গা তৈরি করতে হবে। রাজনীতির বিষয়াসয় এবং সার্বিক প্রাসঙ্গিকতায় জনগণকে বসাতে হবে কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু তা কেমন করে। আমাদের সকল রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে ? মিলিটারির বন্দুক দিয়ে ? সাদা কলারের সিভিল সোসাইটি? নাকি বিদেশ থেকে কিছু লোক আমদানি করে? কী হবে সমাধান। আমাদের সমাধান আমাদেরই বের করতে হবে। বিগত সময়ের চর্চা, সংস্কৃতি, জনদাবি এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসই সেই জিজ্ঞাসুজবাবের পথসোপান তৈরি করবে। অবশ্যই এ পথসোপান তৈরি পথেও রাজনৈতিকদের একাগ্রতা ও সততা থাকতে হবে। সরকার আসা সরকার যাওয়া, এমপি মন্ত্রী বনে যাওয়ার যে সংস্কৃতি তাকে পরিণত করেতে হবে জনস্বার্থে। জ্ঞানসমাজে আমজনতার অস্তিত্বকে স্বীকার করা হয় না। মনে করা হয় তারা কিছু জানে না। হয়তো কতখানি জানে কতখানি জানে না তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে কিন্তু তাকে অনুপস্থি করার কার্যকারণ তৈরি করা মানে নিজের জন্য নিজে বিপদ তৈরি করা। চিকন বুদ্ধি, মোটা চাক্কা, গতরভরা চর্বি, ঝোলা ভর্তি টাকা এসব ক্ষণস্থায়ী মজা লুটে ঠিকই। কিন্তু জনদাবি এবং অবিশ্বাস একসময় এসব হাম্বড়তাকে তুলা ধুনো করে। শেষ বিচারে জনরায় তৈরি হয় তার স্ব-ব্যক্তিত্বে, এক্কেবারেই আমজনতার মত রুক্ষ হয়ে। মাটিতে মিশে যায় জনবিরোধী, ব্যবসামার্কা রাজনীতি ও সিদ্ধান্তের কাঠামো, কাঠামোর সহভাগী আর চাকুকররা। তাই সকল বিপদ মাথায় রাখা ভালো। উচিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করা। নিজে নিজের বদল করতে চাইলে তা অনেকখানি আরামের হয়। কিন্তু বিউটিশিয়ান করলে তাতে চোট লাগার সম্ভাবনা থাকে। তাই রাজনৈতিক খেলোয়াড়রা অনেক বেশি অবদান রাখবেন মিথ্যামিথ্যির নবসংস্কৃতির পরিবর্তনে। নয়তো কে জানে জনগণ যদি পুঁষে ওঠে আরেকটা ৯১’র জন্ম দেয়।বিঃ দ্রঃ : আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চায় একটা মজার বিষয় যোগ হয়েছে। যে দল সরকার গঠন করে তার বাইরে যারা থাকেন তারা ‘বিরোধী দলে’র পরিবর্তে ‘বেসরকারি দল’ হয়ে যান। সরকারি দলের আচার আচরণ যে এ সুযোগ তৈরি করে তা নয়; একই সাথে বিরোধী দলও নিজেকে এমনটি ভাবতে পছন্দ করেন এবং এ সুযোগ গ্রহণ করেন। আমাদের নির্বাচণী ব্যবস্থার কারণে যে দল সরকার গঠন করে তারা ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পায় না। তার মানে ৬০ শতাংশ ভোট তিনি পান না। তাহলে আমরা যে দল সরকার গঠন করে সে দলের যেমনতর স্বচ্চতা, জবাবদিহিতা প্রত্যাশা করি একই সাথে যারা ৬০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বিরোদী দলে থাকেন তাদেরও স্বচ্চতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সময় এসেছে। সরকারি দল যেমন প্রতি বছর বছর তারা কী করেছেন কী তা করছেন তা নিয়ে জনশুনানীর ব্যবস্থা করতে পারেন। পাশাপাশি বিরোধী দলও এক বছর অন্তর অন্তর জনস্বার্থে (৬০ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধি) কী করেছেন, কতখানি সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছেন, মানুষের অধিকার, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ রাষ্ট্রের কল্যাণে কতখানি কাজ করেছেন তার জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। বিরোধী দল মানে কেবল বিরোধীতা নয়, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলও সরকারের অংশ। তাছাড়া যে ভোটার ভোট দিয়েছে তার জন্য সে কি উপহার পেল, কতখানি নিশ্চয়তা পেল তা জানার অধিকার নিশ্চয়ই তার আছে।আসুন সবাই এক সাথে গাই, আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালোবসি।

1 comment:

Anonymous said...

nice post this is.