Saturday, May 12, 2007

গণতন্ত্র নির্বাচন ও সাম্প্রতিক হালচাল

আমরা কেমন আছি?আমি ভালো আছি, আপনারা ভালো আছেন কিংবা আমরা সবাই ভালো আছি-এ কথাটি সত্যি করে বুকের ভেতর থেকে বের হয় কিনা আমার জানা নেই। বিলকুল আমরা ভালো নেই। বিকল সামাজিক কাঠামো আমাদের ভালো থাকতে দিচ্ছে না। সর্বত্র একটা নাজানা ‘অনিয়ন্ত্রণ’ কাজ করছে আমাদের র›েদ্ধ্র র›েদ্ধ্র্র।স¤প্রতি, বাহিরবিশ্বে মনযোগ-কাড়া কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। জর্জিয়ায় এনজিও ও সেনাবাহিনীকে সক্রিয় করে একটি সিভিল ক্যু হয়েছে; ভেনিজুয়েলায় মিনি অভ্যুত্থান করে সামাল দেয়া যায়নি, তবে আবার চেষ্টা চলছে শাভেজ সরকারকে সরানোর জন্য; আর্জেন্টিনায় বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ এর ‘ সংস্কার’ কে এগিয়ে নিতে গিয়ে জনবিক্ষোভের মুখে পালাতে হয়েছে শাসকদের; মজার বিষয় হয়েছে ব্রাজিলে, আমেরিকার নাকের আগায় বাম ও প্রগতিশীলরা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় এসেছে। একই সাথে ভারত বামফ্রন্ট জোট সবকিছুকে ছাড়িয়ে ১৯৩ আসনের মধ্যে ১৩৫ আসনে জয় লাভ করেছে। আপনারা সবাই মানবেন যে, হালে আমরা এবং আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ একটি টানটান ও গুমোট সময় পার করছি। তাই আমি বাহিরবিশ্বের ঘটনাসমূহকে আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে বলে মনে করি। ইতোমধ্যে আমাদের রাজনৈতিক মহল ও অন্যরা এমনতর বিষয়াবলীর আলামত দেখতে পাচ্ছেন বলে দু’একবার বলেছেন। স্বাধীনতার ৩৫ বছরে আমরা বাস করছি। কিন্তু মুক্তি পেয়ে আমরা কেমন আছি, এটা একটা বড় প্রশ্নবোধক। বিগত ১৫ বছরে আমাদের অর্থনীতি আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। একই সাথে জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ৪৮ থেকে ৪২ এসেছে। এভাবে চলেলে ১৫ বছর পর আমাদের অর্থনীতির আয়তন ৬০ বিলিয়ন ডলার থেকে ১৪৪ বিলিয়ন ডলারে পৌছবে। এটি আশাব্যঞ্জক বলবো। এমনতর অর্থনৈতিক সমীকরণ আমাদের মনে আশা তৈরি করে। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য জায়গায়।ইদানিং মানুষ কথা পাড়ে, দেখ দেশ থাকে কিনা/ অমুকে দেশ বেচে দিবে/ অমুকে দেশের সব টাকা বিদেশে নিয়ে যায়। এসব কথা প্রকাশ্যে বলাবলি হয়। তার মানে দেশের সাথে যারা সম্পর্কিত ও ব্যবস্থাপনা পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন তাদের প্রতি সাধারণ মানুষ বিভিন্ন প্রশ্ন তৈরি করছে। কিন্তু কেন করে? সাধারণ মানুষের অভিব্যক্তি ‘ যাদের ভোট দিই তারা ভোটের আগে আমাদের থাকে আর ভোটের পরে ‘দলের লোক’ হয়ে যায়। আমাদের কথা শুনেন না। আমাদের উন্নয়ন হয় না। তাত্বিকভাবে দেখলে বোঝা যায়, মানুষ আসলে ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। হতে পারে এ ব্যবস্থার ওপর ‘জননিয়ন্ত্রণ’ থাকে না বলেই মানুষ বিগড়ে যায়। নানা প্রশ্ন তোলে। কিন্তু, আসলেই এ প্রশ্নগুলো অমূলক কীনা? রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য লাগে একটি সরকার। আর সরকার গঠন হয় রাজনৈতিক দল থেকে। এবং প্রক্রিয়াটি হচ্ছে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট। আর যে পদ্ধতি অনুসরণ করে আমদের দেশ পরিচালিত হয় তার নাম গণতন্ত্র। নেবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন বলেছেন, গণতন্ত্রে জটিল আকাঙ্খা থাকে, যার মধ্যে নিশ্চিতভাবে নির্বাচন ্এবং নির্বাচনের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয় অর্š—ভুক্ত। এর জন্য মুক্তি ও স্বাধীনতা রক্ষা, আইনগত অধিকার মেনে নেয়া, মুক্ত আলোচনা নিশ্চিত করা এবং সংবাদপত্র ও নিরপেক্ষ মতামত পরিবেশনের নিশ্চয়তা দরকার হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখন নাগাদ সেভাবে গণতন্ত্রায়ন হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরও গণতন্ত্র চর্চা করা হয় না। রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ কমিটি গঠন হয় ওপর নেতাদের ইচ্ছামত। এত সাধারণ সদস্যদের মতামত থাকে না। এমন কি বড় দল সমূহের কোন সদস্য তালিকা নেই। আপনাদের মনে আছে, কিছুদিন আগে এ হলে একটি দলের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে একজন সাংসদ টেবিলের ওপর ওঠে অন্য একজন সাংসদকে মারতে উদ্যাত হয়েছিল। আবার দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক কোন সম্মেলনই হয় না। সদস্যদের বেশিরভাগই দলের গঠনতন্ত্র পড়াশোনা করেন না। দলগুলো বছরে কী পরিমাণ চাঁদা গ্রহণ করে, আয় করে এবং কি পরিমাণ কোনখাতে ব্যয় করে তার কোন হিসাব কখনো প্রকাশ করা হয় না। এতে করে অর্থনৈতিক সুশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। নির্বাচনকালীন সময়ে টাকাওয়ালারা দলের প্রার্থীতা কিনে। দলও তাদের মনোনয়ন দেয়। এসব হয় এক্কেবারে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। অনেক সময় দুনীতিবাজ, ঋণখেলাপি, কালোবাজারীরা দলের মনোনয়নে ভোট করে এবং সাংসদ নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা করতে হবে। ‘ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি’ তৈরি কাজ দল থেকে শুরু করতে হবে। দলগুলো তাদের প্রার্থীদের সকল তথ্য পুস্তিকাকারে প্রকাশ করেত হবে এবং তা একই সাথে ওয়েব সাইটে প্রকাশ করতে হবে। এটি জনগণকে তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়িত করবে। আর হাঁ রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধিত হতে হবে। নির্বাচিত হবার পর সংসদ সদস্যগণ আর জনগণের কাছে আসেন না। তারা তাদের মত পরিকল্পনা করেন। অনেক সময় দেখা যায় স্থানীয় সরকারের বহুকাজ সংসদ সদস্যগণ করে ফেলছেন। এতে স্থানীয় সরকারের কাজ বাধাগ্রস্থ হয়। তাই স্থানীয় সরকার ও সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব সম্পর্কে আরো সুনিদিষ্ট করতে হবে। স্থানীয় উন্নয়নে এমপিদের ভূমিকা বিধান বাতিল করা খুবই জরুরি। একই সাথে এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। আবার সংসদে সংসদ সদস্যদের কোন কোন বিষয়ে ভুমিকা খুবই গৌণ। তারমধ্যে একটি বাজেট। এখন নাগাদ বাজেট মূলত অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রিক। বাজেটকালীন সময়ে ও অর্থ-সম্পদ বরাদ্দের প্রশ্নে বিদ্যমান চঁনষরপ অপপড়ঁহঃং ঈড়সসরঃঃবব, ঈড়সসরঃঃবব ড়হ চঁনষরপ ঊংঃরসধঃবং ধহফ চঁনষরপ টহফবৎঃধশরহমং সহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ে আরো ৩৫টি স্টান্ডিং কমিটি থাকলেও তার কোনটি কোন প্রকার ভূমিকা রাখে না। আমাদের সংসদ বিগত ১০ বছর ধরে কেবলমাত্র ডবংঃ গরহরহংঃবৎধষ মডেল অনুসরণ করে কাজ সম্পাদান করে। সংসদীং কার্যপ্রণালী ও কার্য সম্পাদান প্রক্রিয়ার কাঠামো আরো পুনাঙ্গ করতে হবে। লাগাতার সংসদ বর্জন সংসদকে অকার্যকর ও দুর্বল করে তুলছে। অবশ্যই এসব গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক দিক নয়। দলের টিকেটে এমপি হবার পর তিনি আর দলের বাইরে ভোট দিতে পারেন না তাতে তার সংসদ সদস্য পদ চলে যায়। নিকট অতীতে আমরা বিএনপি’র সাংসদ আবু হেনার ক্ষেত্রে তা দেখেছি। এতে ব্যক্তির স্বাধীনতা ক্ষুন্ন হয়। এসব কারণে এমপি আর জনপ্রতিনিধি না থেকে দলের প্রতিনিধি হয়ে যান। এ পদ্ধতিও গণতন্ত্রবান্বব নয়। গণতন্ত্রের জন্য বিপরীত রীতি বদল করা বাঞ্চনীয়।রাজনৈতিক দলের বাইরেও বহুজাতিক কোম্পানি ও পুঁজিপতিরা অনেক বেশি ক্ষমতা ভোগ করে। রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের প্রতি নির্ভরতা প্রদর্শন করে। এতে করে দেশের ভেতরে একটি বিকল্প প্রশাসন তৈরি হয়। যদি নির্বাচিত সরকারের বাইরে অনেক বেশি ক্ষমতার অস্তিত্ব থাকে তাহলে বিশুদ্ধভাবে নির্বাচিত ও নীতিগতভাবে জবাবদিহিমূলক সরকার গণতন্ত্রের শর্ত পুরণ করতে পারে না। এবার আসা যাক রাজনৈতিক দলের সাথে সাধারণ মানুষের সম্পর্ক কেমন হবে। রাজনৈতিক দল যা বলবে তাই কী ঠিক কিংবা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতার যদি মালিক জনতাই হয় তাহলে আমজানতা এত অসহায় কেন।এ সম্পর্কের সোপান হিসেবে আমি রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারকে গুরুত্ব দিতে চাই। রাজনৈতিক দলসমূহের ইশতেহারই সাধারণ মানুষের সাথে দলের একটি সামাজিক চুক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এবং প্রত্যেকটি দল ইশতেহারকে সাজাতে হবে তেমনতর শর্তের ভিত্তিতে। আমরা যদি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামের ইশতেহার দেখি তাহলে দেখা যাবে তা অনেক বেশি মন্তব্যধর্মী, যত না তা সুপারিশধর্মী। প্রতিশ্র“তি প্রদানের ক্ষেত্রেও তা অনেক বেশি উচ্চাকাঙ্খী এবং অস্পষ্ঠ। জনগণের সেবা’র জন্য তেনারা ভোটপ্রার্থী হলেও দেখা যায় তাতে সেবার কথা, কী সেবা, কত সেবা, কোথায় সেবা এ রকম সরাসরি উদ্যোগের কথা ইশতেহারসমূহে থাকে না। ইশতেহারে অবশ্যই তা উল্লেখ থাকতে হবে। এবং উল্লেখ থাকতে হবে এ ইশতেহার কিভাবে মনিটরং হবে, দল কিভাবে জনগণকে জবাবদিহি করবে। যদি দল ইশতেহার অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে জনগণ কিভাবে তার বিকল্প গ্রহণ করবে তাও ইশতেহারে উল্লেখ করতে হবে। ইশতেহারসমূহ প্রণীত হয় মূলত কেন্দ্রিয় চিন্তা নিয়ে। এতে স্থানীয় চিত্র বা প্রস্তাবনা খুবই কম থাকে। তাই স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রার্থীরা তাদের কেন্দ্রিয় ইশতেহারের স্থাণীয়করণ প্রকাশ করেতে হবে। যেখানে তিনি তা প্রস্তবনাসমূহ এবং জবাবদিহিতা কৌশলসমূহ বর্ণনা করবেন।নির্বাচন হচ্ছে সমাজে ভালো নেতাদের বাছাই ও ক্ষমতায় প্রেরণের একটি আধুনিক ব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনের দিন হবে একটি উৎসবের দিন এবং ক্ষমতা ভোগের দিন। কিন্তু আমাদের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একাধিক কথা আছে। একটি বাড়িতে যদি কোন উপলক্ষে ভোট হয় সেখানেও এখন নানা টুলস ব্যবহার করা হয়। ইলেকশান ইঞ্জেনিয়ারিং’ আমাদের এখানে হালে খুবই বলা-কওয়া একটি শব্দ। ৯০-এর পর তিনটি জাতীয় নির্বাচন চলে গেছে। আমরা আশা করেছিলাম আমাদের গণতন্ত্র্র অনেক বেশি পোক্ত হয়েছে; কিন্তু কৈই?বরং আগামি নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় তেরি হয়েছে। ২২ মে রাজধানীমুখী একটি পত্রিকা খবর দিয়েছে বর্তমান ভোটার তালিকার আওতায় আগামি নির্বাচনে বেশিরভাগ রাজনৈতিক অংশগ্রহণ করবে না। তাহলে আমরা কিসের মধ্যে বসবাস করছি? দিন কয়েক আগে নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচন কমিশন হচ্ছে একটি পোস্টবক্স। এ কথা যদি সত্য হয় তাহলে নির্বাচন কমিশন কোথায় থেকে পরিচালিত হয় তা সন্ধান করা খুবই জরুরি। কেননা বর্তমান ভোটার তালিকা যদি সঠিক হয় তাহলে দেশের নানা পরিকল্পনাও বদল করতে হবে। এবার প্রায় ১০ কোটি মানুষকে ভোটার দেখানো হয়েছে। ২০০৫ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৩ কোটি ৭০ লাখ। আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রবৃদ্ধির হার ১.৪৮ শতাংশ। সে মোতাবেক ২০০৬ এর মধ্য ভাগে আমাদের জনসংখ্যা হবে ১৩ কোটি ৯০ লাখ। এ হারে ভোটার সংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লাখের বেশি হবার কথা নয়। যদি ১০ কোটি (প্রায় ৯ কোটি ১৩ লাখ) ভোটার হয় তাহলে আমাদের মোট জনসংখ্যা সে অনুপাতে প্রায় ১৬-১৭ কোটি। কিন্তু আপনারা জানেন সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ যে পিআরএসপি দলিল প্রণয়ন করেছে তাতেও জনসংখ্যা দেখানো হয়েছে ১৪ কোটি। তাই আমাদের জনসংখ্যা বর্তমান ভোটার তালিকার হার মোতাবেক যদি আসলেই ১৬-১৭ কোটি হয় তাহলে আমরা পিআরএসপি অর্জন করতে পারবো না। এতে করে ২০১৫ সালের মধ্যে সারা দুনিয়া দারিদ্র্যকে অর্ধেকে নামিয়ে আনলেও আমাদের দারিদ্র্য বেড়ে যাবে। যেহেতু প্রতিবার ভোটার তালিকা করার সময় সরকারি দলের প্রতি নানা অভিযোগ ওঠে তাই বোটার হবার প্রক্রিয়াটি উন্মুক্ত রাখতে হবে। উপজেলা নির্বাচন কমিশনে পর্যাপ্ত ফরম থাকবে; কোন নাগরিক যদি মনে করে তার বয়স ১৮ বছর হয়েছে তাহলে ইউপি সনদ ও বয়স প্রমাণের সনদ নিয়ে এসে সে ভোটার হতে পারবে। প্রক্রিয়াটি হবে চলমান। ভোট প্রদান প্রক্রিয়ায় ব্যালেট পেপারে শুধুমাত্র মার্কাসমূহ দেয়া থাকে। কিন্তু ভোটদাতা যদি কাউকে ভোট না দিতে চায় তাহলে তার কোনে সুযোগ থাকে না। এ জন্য ব্যালেট পেপারে একটি ‘না’ বাচক ভোটের ব্যবস্থা রাখতে হবে। যা থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশে আছ্।ে আমেরিকাতে লিখে দেবার সুযোগ রয়েছে। তা না হলে একজন ভোটাকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়; এমন কি যদি কোন প্রার্থী তার পছন্দের না হয়। একজন প্রার্থী ভোটে কতটাকা খরচ করবেন। ১৯৭২ সালের প্রবর্তিত ও ২০০১ সালে সংশোধিত জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ মোতাবেক, অন্য অনেক কিছুর মধ্যে রাজনৈতিক দলসমূহকে তাদের নির্বচিন সংক্রান্ত আয়-ব্যায়ের সকল হিসাব সঠিকভাবে নির্বাচন পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হবে। জানামতে ২০০১ সালের নির্বাচনের অংশগ্রহণকারী একটি দলও এখন নাগাদ তাদের হিসাব জমা দেয়নি। যারা তাদের দলের আয় ব্যয়ের হিসাব ঠিক মত জমা দিতে পারেন না তারা যে ঠিক মত রাষ্ট্রের কোষাগার সংরক্ষণ করবেন ও হিসাব দেবেন তার কী নিশ্চয়তা থাকতে পারে।ভোটে এখন একজন প্রার্থী কোটি টাকা খরচ করেন কেবলমাত্র মিছিল, তোরণ নির্মাণ, আলোক সজ্জা ও প্রচারণার পেছনে। আইন করে এসব বন্ধ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন প্রতি প্রার্থী থেকে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় অতিরিক্ত ৪০ হাজার টাকা বেশি নেবেন। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন নিজে কমন সভার ব্যবস্থা করবেন এবং প্রার্থীরা এসে তাদের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বক্তব্য রাখবেন। এতে করে প্রার্থীদের ব্যয় ও সংঘাত কমে আসবে। তারা মুলত মানুষের ঘরে ঘরে ভোট প্রচারণা করবেন। বর্তমান সময় তথ্যপ্রযুক্তির সময়। ধীরে ধীরে বোট গ্রহণের আমাদের বিদ্যুতায়ন পদ্ধতির দিকে যেতে হবে। এতে সময় সময় সংরক্ষণ হবে, ব্যয় কমে আসবে এবং স্বচ্ছতা আসবে অনেক বেশি। রিটানিং অফিসার কর্তৃক আগে কিছু ব্যালেট সরিয়ে রেখে পরবর্তীতে ভোট গননার সময় পছন্দের মার্কার সিল মেরে ব্যালেট জমা দেবার যে রছম আমাদের চালু হয়েছে তা কমে আসবে। নির্বাচনের ফলাফলের প্রতি সম্মান দেখানে যদিও গণতন্ত্রের প্রধান শর্ত। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি বছর ভোটের পর থেকে মারাত্মক সহিংসতা চলতে থাকে। এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এবং রাষ্ট্রকে নাগরিকের এ নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা মোকাবেলায় বিশেষ আইন প্রবর্তন করতে হবে। একজন মানুষ আসলে কয়টি আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হবেন, এ বিষয়টিও নির্ধারণ করতে হবে। কেননা আমাদের বড় দল সমূহের ওপরের নেতারা একজন তিন চার আসন থেকে প্রার্থীতা করেন। এ ফক্সি প্রার্থীতা বন্ধ করতে হবে। কেননা কেউ একজন তিন আসন থেকে নির্বাচিত হলে পরবর্তীতে তিনি একটি আসন রাখেন বাকি দুই আসন ছেড়ে দিতে হয়। সেসব আসনে তার দলের অন্য একজন প্রার্থীতা করেন। এ আসন ছেড়ে দেয়া মানে জনগণের বিগত ভোটের সাথে প্রতারণা করে। জাতীয় সংসদের আসন নিধারর্ণের ক্ষেত্রে ভোটার অনুপাতে আসন সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। বিগত নির্বাচনে নোয়াখালী ১ আসনে (সেনবাগ উপজেলা নিয়ে গঠিত) মোট বোটার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৮। আবার নোয়াখালী-২ আসনে (বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ি উপজেলা নিয়ে গঠিত) মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৩ হাজার ৭৭৫ জন। চাটখিল আসনে মোট ভোটার ছিল ১ লাখ ২৯ হাজার ২৩১ জন। এ পরিসংখ্যানটি ভালো করে দেখলেই প্রশ্ন তৈরি করে বেগমগঞ্জ আসনে এত ভোটার কেন? এ আসনকে অন্য দুই আসনের সাথে ভোটারের সমন্বয় করা যেত না, যদি ঔভাবে সীমানা নির্ধারণ করা হতো? নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের এ বৈষম্যের কারণে কোনো দল সারাদেশে ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েও ১০০-এর কম আসন পেতে পারে। আবার মাত্র ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েও দেড় শতাধিক আসনে বিজয়ী হতে পারে। এ জন্য জনসংখ্যা অনুপাতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নিধারণ করতে হবে।আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ২০০৫ সালের মে মাসে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন একটি নির্দেশ দিয়েছিলেন নির্বাচনের প্রার্থীদের সম্পর্কে। সেখানে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য হলফনামার মাধ্যমে সংগ্রহ করবেন এবং তা আগ্রহী জনতার কাঝে তা প্রকাশ করবেন। এসব তথ্যের মধ্যে থাকবে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, আয়ের উৎস, প্রার্থী ও তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের সম্পত্তির হিসাব ও দায়ের বিবরণ, ব্যাংক ঋণের পরিমান এবং এর আগে সংসদ সদস্য হয়ে থাকলে জনগণের প্রতি তার প্রতিশ্র“তি পুরণের বিবরনী। আমি এ নির্দেশটি বাস্তবায়নের চিত্র দেখতে চাই। যদি এ নির্দেশনাটি বাস্তবায়িত হয় তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে যোগ্য, দক্ষ ও সংবেদনশীল নেতা বেরিয়ে আসবে। আসলেই শাসন ব্যবস্থার ওপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। একজন ভোট দিলাম তো খালাস। মেয়াদকালে তিনি আমার জন্য কোনো দায়িত্ব পালন করলেন কি করলেন না তা বলা-কওয়ার কোনো সুযোগ নাই। তাই মেয়াদকালে তিনি যদি জনদায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, জনগণ যদি তাকে প্রত্যাহার করতে চায়, তাহলে তা করার বিধান তৈরি করা খুবই জরুরি। কিন্তু, এরজন্য নাগরিক সমাজ কী করতে পারি/বলে নেয়া ভালো রাষ্ট্রের সংজ্ঞা বদলেছে। এখন আর শুধু আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ নিয়ে রাষ্ট্র নয়। আধুনিক রাষ্ট্রের উপাদানের সাথে আরো তিনটি জিনিস যোগ হয়েছে। আর তা হচ্ছে বাজার, নাগরিক সমাজ এবং গণমাধ্যম। গত সময়গুলোতে আমরা যখনই ভেঙ্গে পড়েছি গণমাধ্যমসমূহ আমাদের সাহস যুগিয়েছে নানাভাবে। আজকে নাগরিক সমাজ থেকে এসব বিষয়ে আলোচনা তৈরি করছে। নাগরিক সমাজ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে সংসদ, সংসদ সদস্য, নির্বাচন ও ভোটের অধিকার সম্পর্কে মানুষ বিশেষভাবে সচেতন করা। আমার ভোট আমি দেব দেখে শুনে বুঝে দিতে হবে। আর অবশ্যই সমাজের একটি অংশকে জোর ভূমিকা নিতে হবে এ জন্য যে, সকল স্তরে যেন জননিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়। জনপ্রতিনিধিরা যেন বুঝতে পারেন শেষ বিচারে জনতাই সব। এরজন্য সকল পর্যায়ে একটি শক্তিশালী প্রেসার গ্র“প তৈরি করা জরুরি। তাহলে একটি জবাবদিহিমূলক, স্বচ্ছ ও শক্তিশালী বাংলাদেশ তৈরি হবে।আমি প্রথমে দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের কিছু উদাহরণ দিয়েছিলাম। এ বিষয়গুলোকে আমি আলাদা কিংবা বিছিন্ন মনে করছি না। দুনিয়ার সকল বিষয়াষয় এর সাথে পারষ্পরিক যোগাযোগ ও প্রেষণা থাকে। আমি বরং এ সমূহ পরিবর্তনের সাথে আমাদের কানসাট ও শনির আখড়ার একটি যোগাযোগ খোঁজার পক্ষপাতী।আমি এ বিষয়গুলোকে সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে বলতে চাই। এ সামাজিক রাজনেতিক আন্দোলন কেবলমাত্র সামাজিক কাঠামোর ব্যর্থতার ফলে তৈরি হয়। তাই আমাদের অবশ্যই রাজনৈতিক কাঠামো ও রাজনৈতিক দল সমূহের অভিগমন এবং নির্বাচন ব্যবস্থার আলোচ্য দিক সমূহ জোরদার করার প্রস্তাব করছি।অবশ্যই আমাদের সকল সমাধান হবে রাজনৈতিক। কিন্তু যদি রাজনৈতিক দল ও দলের কর্তাদের প্রতি জনঅনাগ্রহ তৈরি হয় তাহলে তা আমাদের সকলের সকলের জন্য হবে বিপদের। আসুন, আমরা একটি শক্তিশালী, সয়ম্ভর ও আদর্শিক বাংলাদেশ তৈরিতে ভূমিকা রাখি।
( লেখক : একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনের প্রধান)

No comments: