Friday, July 13, 2007

গণহীন গণমাধ্যম

একটি জটিল জায়গায় দাঁড়িয়ে হালের গণমাধ্যম নিয়ে কিছু প্রশ্ন তোলা যেতে পারে। গণমাধ্যমগুলো যেভাবে ‘পাগলা ঘোড়া’ হয়ে সামনে দাবড়াচ্ছে তাতে এ ভাবনাগুলো আমলে রাখার দাবি অনেক বেশি যৌক্তিক। আজকের সময়ে আমজনতা অনেক বেশি সচেতন। কাছের অতীতেও মানুষ যেখানে ‘খবর’ নিয়ে তৃপ্ত থাকতো এখন সেখানে তারা গণমাধ্যম, তার চেহারা, তার ক্ষমতা, তার মেদ, মর্জি- মেজাজ, চালাকি-শঠতা নিয়ে কথা পাড়তে শুরু করেছে।যে কোনো সময়ের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে হালের গণমাধ্যম অনেক বেশি আগুয়ান। সুখের কথা গণমাধ্যমের অডিয়েন্সও সে তুলনায় খুব একটা পিছিয়ে নেই। গণমাধ্যমগুলো এ রূপ ধারণের সাথে সাথে তাদের সামাজিক কাজ-কর্মের জায়গাও সমানতালে সামলে নিচ্ছে, সামনে এগুচ্ছে।কিন্তু প্রশ্ন থাকছে কোন দিকে এগুচ্ছে, কার স্বার্থে এগুচ্ছে ? আমজনতার সেখানে প্রবেশাধিকার কতখানি?
এক.গণমাধ্যমগুলো আজকে মানুষকে সচেতন করা কিংবা শিক্ষিত করার যে দাবিগুলো তুলছে তা আলবৎ সত্য। আমাদের গ্রামগুলোতে এখন মেয়েরা আর কিছু না হোক চুল ধোয়ার জন্য ‘সানসিল্ক টুনিপ্যাক’, ত্বক ফর্সা করার জন্য ‘ফেয়ার এন্ড লাভলী টুনিপ্যাক’ অথবা গোছলের জন্য কিংবা হালাল সাবান ব্যবহার করাতো করছে। এ সবইতো আমাদের টেলিভিশনগুলোর বদান্যতা। গণমাধ্যম থেকে শিখলো। টেলিভিশনগুলো তাদের মহান (!) দায়িত্ব পালন করছে বলেই মানুষ দু-চার শিখছে। সাবান ব্যবহার করলে তা হালাল হতে হবে তাও শিখছে। মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ। এখানে তো সবই হালাল হতে হবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা সবই ফরফরে হালাল।কেউ কেউ অবশ্য এখন এ নিয়েও প্রশ্ন জাগান। যেমন গণমাধ্যমগুলো সাধারণ মানুষের ধর্মীয় মেজাজকে পুঁজি বানিয়ে বিজ্ঞাপনদাতা কোম্পানিগুলোর স্বার্থ দেখছে কিনা ? কিংবা সচেতনভাবে এ শব্দগুলো ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সা¤প্রদায়িক মেজাজকে সচল করতে চায় কিনা ?এ সবই আসলে গণমাধ্যমের সচেতন কেরামতি। কে না জানে গণমাধ্যমের ক্ষমতা। তাই হয়তো সবাই একটু এ অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা, শক্তির আর্শিবাদ চায়। গণমাধ্যমও একটু একটু আর্শিবাদ দেয়। কিন্তু সবাইকে দেয় না। কেউ কেউ সে সুযোগ পায়। বিনিময়ে লেনদেন বাড়ে। হিসাব চলে ডলার, পাউন্ডে। আর এ লেনদেনের ছায়া পড়ে গরিবের ওপর। ভূমিহীন-গরিব চাষীর মেয়ে তখন চাল না কিনে চুল ধোয়ার জন্য ‘সানসিল্ক টুনিপ্যাক’ কিনে। এতে হয়ত গরিব-চাষী একবেলা না খেয়ে থাকে কিন্তু কোম্পানির মুনাফার অংক তো বাড়ে। এটাই তো আসল শিক্ষা ! বিজ্ঞাপন কিভাবে মানুষকে পণ্যমুখী করে তার প্রবিষ্ট উদাহরণ। এ তো গেল টেলিভিশন বিজ্ঞাপনের দৌরাত্ম্য। এবার আসা যাক টেলিভিশনে অনুষ্ঠানগুলোর দিকে। কাদের জন্য অনুষ্ঠানগুলো বানানো হয় তাও জেনে রাখা ভালো। সবশেষে সংবাদে যাওয়া যাবে। এ জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনের একদিনের অনুষ্ঠানসূচি নমুনা হিসেবে দেখা যেতে পারে। ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানসূচিতে ছিলো-সুপ্রভাত বাংলাদেশ, অর্কাইভস থেকে নির্বাচিত গান, ওশান গার্ল, সংবাদপত্রের পাতা থেকে, স্বাস্থ্য তথ্য, গডজিলা, সবার জন্য শিক্ষা, চাওয়া-পাওয়া, সুখী পরিবার, আলোর ঝর্ণাধারা, সঙ্গীতা, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, হাতের কাছে কম্পিউটার, ইতিহাস সংস্কৃতি উন্নতি, সন্ধামালতী, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অুনুষ্ঠান, শেয়ার বাজার, আবহাওয়া বার্তা, কুইজ কুইজ, থ্রি স্টুজেস, নাটক: সোনার হরিণ, নাটক: জাল, নাটক: জলে তাহার ছায়ায়, জীবন বাংলাদেশ মরণ বাংলাদেশ। এছাড়াও রয়েছে সংবাদ পাঁচবার, সংবাদ শিরোনাম পাঁচবার, সচিত্র সংবাদ একবার ও দেশ-জনপদের খবর একবার।দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ ভাগ গ্রামের বসবাস করলে তাদের জন্য টেলিভিশনসূচিতে সেভাবে কোনো আয়োজন নেই। স্বাস্থ্য তথ্য, সবার জন্য শিক্ষা, সুখী পরিবার নামে খানতিনেক অনুষ্ঠানসূচিতে থাকলেও সেগুলো প্রচারের সময় ছিলো বেলা ১২টা থেকে ৩টার মধ্যে। কিন্তু প্রচেতণীমূলক এ অনুষ্ঠানগুলো যাদের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয় তারা বোধ হয় কেউই তখন টেলিভিশন সেটের সামনে থাকতে পারে না। হাজারো ইচ্ছা থাকলেও পারে না, কেননা সেই ভোর থেকে সাঁঝ নাগাদ তাকে মাঠেই পেটের তাগিদে মাঠে সময় দিতে হয়। সারাদিনের পরিশ্রান্ত দেহ নিয়ে গ্রামের কৃষক সন্ধায় গিয়ে বসে টেলিভিশনের সামনে। কিন্তু সেখানে তো মহাশঠতা। টেলিভিশনের পর্দায় নাটকের নামে যে আলোর রেখাগুলো ফুটে ওঠে তার সাথে গরিব কৃষকের জীবনের কোনো মিল নেই। মাটির গন্ধ নেই। প্রাণের টান নেই। টেলিভিশনে নাটক দেখানো হয় ঢাকার গুলশানে বসে নিউইর্য়াকে বার্গার বিক্রির স্বপ্নে বিভোর এক যুবকের। অথবা অট্টেলিয়ায় বিশ্ব সুন্দরি প্রতিযোগিতায় যাবে কোনো এক চৌধুরী বাড়ির ‘মিস তহুরা’ (আগে তাহেরা নাম ছিলো)। এমন সব আজগুবি আজগুবি জিনিস।ফলে সাধারণ মানুষ বিনোদনের জন্য শুধু ঢাকাইয়্যা আপা ভাইয়াদের রঙ্গিন রঙ্গিন কোত্তা-কাপড় দেখে সময় পার করে; কিন্তু না পারে বুঝতে, না পারে শিখতে। তবে কলিজার ভেতর ঢাকাইয়্যা আপা ভাইয়া সাজার জন্য খুব খুটসুট করে বৈইকি।গ্রামে ধানের জমিতে পোকার আক্রমণ, সবজিতে পোকার মড়ক, জোতদারের জমি দখল, যৌতুকের জন্য তালাক এমন বহু বিষয়ে তাদের জানা/শেখার দরকার থাকলেও তারা সে সুযোগ পায়না। অথচ রাষ্ট্রের টাকায় পরিচালিত এ প্রতিষ্ঠানটি অবশ্যই দেশের বেশিরভাগ মানুষের স্বার্থে পরিচালিত হওয়া উচিত।টেলিভিশনের এ জাতীয় বিবেচনাহীন আজকে বিনোদন নিছক ‘বাজারী’ শব্দে পরিণত হয়েছে। বিনোদনের নামে সাধারণ মানুষের মাঝে তাদের সম্পর্ক-যোগহীন, উচ্চবিলাসী চেতনার জন্ম দেয়া হচ্ছে। এসবের কারণে দেশের একমাত্র সরকারি টেলিভিশনটি আজো জনগণের টেলিভিশন হয়ে উঠতে পারেনি। অবশ্য এর মাঝে বেসরকারি টেলিভিশনগুলো কিছুটা অন্তত ভূমিকা রাখতে পারছে। তবে সেখানেও অনুষ্ঠান তৈরি, অনুষ্ঠানের বিষয়, সম্পাদনা, প্রচার সময় অনেক বেশি উপরতলাবান্ধব, উচ্চবিলাসী।দুঃভাগ্য মানুষের, দুনিয়ার অনেক দেশে পাড়ায় পাড়ায় আলাদা টেলিভিশন থাকলেও আমাদের মোট-মাট চারটা চ্যানেল। তাও তিনটি স্যাটেলাইটে। স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুয়ের তা দেখার সুযোগ নেই। ডিশের সংযোগ লাগে। যাদের মোটে টেলিভিশন কেনার যোগার নেই তার ওপর আবার ডিশের সংযোগ! এটা তাদের জন্য প্রহসন কিনা কে জানে! তবু সরকার বাহাদুর বেসরকারি চ্যানেলকে টেরিস্টোরিয়াল অনুমোদন দেন না। সরকার আসে সরকার যায়, তবু বেসরকারি চ্যানেলকে টেরিস্টোরিয়াল অনুমোদন দেন না। এ দল না-ও দল খালি সে হিসাবে ব্যাস্ত। এতে লাভ কার হয় তা বোঝা না গেলেও ক্ষতি যে পাবলিকের হয় তা খুব বোঝা যায়। আবার অন্য কাহিনীও আছে। কারণ যাদের ডিশ আছে তারা ভুলেও বিটিভিতে যাননা। ‘ইদানিং হুমায়ুন আহমেদ কিংবা হানিফ সংকেত না থাকলে ডিশ মালিক বাঙালী দর্শক বিটিভির জন্য রিমোটের বোতাম টিপে না’।১সংবাদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সারাদিন ঘুরেফিরে সাদ্দাম-বুশ। কিন্তু গ্রামের মানুষের যে আরো কিছু খবর চাই সে দিকে নজর নাই। বাংলাদেশ টেলিভিশনে খবরের শুরু হয় খুনা-খুনি দিয়ে কিংবা বিরোধীদলকে বকাবকি করতে করতে। শেষ হয় মন্ত্রী মহোদয় ক্রিকেট তারকাকে পুরষ্কার তুলে দিচ্ছেন সে সংবাদ দিয়ে। মাঝখানে থাকে আগা-গোড়ার চর্বিত-চর্বণ, সরকারের তল্লিতপ্পার গুনগান। সাধারণ মানুষের যে আবো খবরা-খবর দরকার সেসব খবর যেন খবরই না। সেগুলো প্রজারের কোন আয়োজন নেই। আশার কথা এজন্য অবশ্য আমাদের উর্বর মস্তিস্কজীবী টেলিভিশন কর্তাদের ভাবনার উদ্বেগ হয়েছে। তাই হয়তো সন্ধে ছয়টায় দেশ-জনপদের খবর প্রচার করেন। অবশ্য সংবাদের টাইটেল দেখে বোঝা যায়, এটাই শুধু দেশের খবর। বাকিগুলো দেশ-মানুষের খবর না। সেগুলো গদিওয়ালাদের, কোম্পানিদের খবর। তারা তো মানুষ না মহামানুষ।তবু গরিব মানুষগুলোর শুকরিয়া যে নামেই হোক তাদের জন্য কিঞ্চিত আয়োজন দেখে। যদিও ৬৪ জেলার খবর প্রচারের জন্য সময় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র পাঁচ মিনিট।‘বিটিভির সংবাদকে সাধারণত বলা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানমালার প্রমাণ্য প্রতীক’।২ এছাড়া ‘সংবাদ-মূল্যহীন স্টেরিওটাইপে ট্রিটমেন্টের কারণে বিটিভির সংবাদের কতটুকু অংশজুড়ে কী কী ধরণের সংবাদ ও দৃশ্যাত পরিবেশিত হবে তা বিটিভির অনিয়মিত দর্শক-শ্রোতারাও খুব ভালো করে বলে দিতে পারেন অনায়াসে।’৩
দুই.গণমাধ্যমের মহান কর্তব্যে নিজেদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করার জন্য এখন গণমাধ্যমকে ‘গ্র“প অব কোম্পানি’র অংশ বানিয়ে নিচ্ছে। বাজারের কারণে পুঁজি যত বেশি কেন্দ্রিভূত হচ্ছে তত বেশি পুঁজি বাড়াতে ও তাকে শিকল পরাতে ফন্দি-ফিকির বের করা হচ্ছে। হোক মুদ্রণ মাধ্যম অথবা বিদ্যুতান মাধ্যম সবই এখন বাজার, পুঁজি, মুনাফা, শেয়ার, ফাড়িয়ার মত শব্দগুলোর পাশে ব্যবহার হচ্ছে। সময়ের যে পাগলা ঘোড়ায় আমরা চড়ে বসেছি সেখানে গণমাধ্যমের এ অবস্থা বাচ-বিচারের সময়ও বোধ হয় এখন আর খুব একটা নেই। কর্পোরেট হাউজ, বহুজাতিক কোম্পানির দেশীয় সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান, আমদানিকারক,উৎপাদক, জমি ব্যবসায়ী এখন সবাই পত্রিকার মালিক বনে যাবার জোর হিড়িক পড়েছে। খারাপ কি পত্রিকায় পত্রিকা বেরুবে। সে পত্রিকায় দু কলাম দু ইঞ্চিতে ডেঙ্গু মশার খবর বেরুবে, সাথে ছয় কলাম আট ইঞ্চিতে বেরুবে সে কোম্পানির মশার কয়েলের বিজ্ঞাপন। নিশ্চয়ই এটি একটি মহতী উদ্যোগ। সাদাসিধা মানুষকে শিক্ষিত(!) করার আর কি কোনো ভালো পদ্ধতি থাকতে পারে? কিন্তু পত্রিকার এ জাতীয় মালিকানা, অংশীদারিত্ব, প্রণোদনা দায়িত্বশীল সাংবাদিকতায় কী ভূমিকা রাখছে তা ভাবনার সময় এসেছে। এ জাতীয় পত্রিকার মালিকরা আসলে সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখে কিনা, আসল খবর প্রকাশ করতে পারে কিনা তা কমবেশি উদ্বেগের জন্ম দেয়। সমাজসেবা, দেশসেবা কিংবা সাধারণ মানুষের কল্যাণে দুপাতা-চারপাতা বের করা আর আমদানিকারকের প্রণোদনায় প্রকাশ পাওয়া পত্রিকার আদর্শ লক্ষ্য যে এক নয় তা সহজে অনুমেয়। কেননা এ জাতীয় মালিকের নিয়ন্ত্রণ অলিখিতভাবেই সংবাদ প্রকাশের ওপর এক ধরণের বিধি-নিষেধ তৈরি করে। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলো এ ক্ষেত্রে কর্পোরেট মিডিয়ার উদাহরন টানেন। ইতিউতি দিয়ে দুনিয়াবি কথা বলেন। বিশ্বায়ন বুঝান।তবু আমাদের দমে যাবার কিছূ নেই। এ চাতুরিপনার মাঝেও আমাদের একটু আশার জায়গা আছে। তা অনস্বীকার্যভাবে আমাদের স্থানীয় সংবাদপত্র। ব্যবসা-বাণিজ্যের এ সময়ে স্থানীয় সংবাদপত্রই হতে পারে সমাজ, সংস্কৃতি আর গণমানুষের বাতিঘর।
তিন.২০০৩ সালের এমএসসি পরীক্ষায় দেশের বেশিরভাগ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের ফলাফল খারাপ হয়েছিল। অ+ পাওয়া ছাত্র ছিলো হাতেগোনা। নোয়াখালীতে ভালো ফলাফলের সৌভাগ্য হয়েছিল হাতিয়ার একটি ছেলের। এলাকাবাসী, পরিবার এমন কি জেলার মানুষেরও আশা ছিল এ খবরটি পত্রিকায় আসবে। কিন্তু আসেনি। প্রতিদিন এ রকম হাজার ঘটনা খবর হয়ে গণমাধ্যমে আসুক আসুক করে গ্রামদেশের মানুষ। কিন্তু আসে না। মূলধারার যে সাংবাদিকতা সেখানে এসব খবর অনেকটাই আড়ালে-আবডালে থেকে যায়। বিজ্ঞাপনের ফাঁকে কিংবা মফস্বল পাতা নামক অন্দর মহলে মাঝে মাঝে যে দু একটা সংবাদ হাতড়ে পাওয়া যায় তাও নিতান্ত লজ্জাজনক। কিন্তু এ প্রান্তিক মানুষগুলোরও যে দর্শন থাকতে পারে, বিশ্বাস থাকতে পারে, মূল্যবোধ থাকতে পারে, অর্থনীতি, সমাজনীতি কিংবা নিজস্ব একটা বেঁচে থাকা থাকতে পারে তা বরাবরই উপেক্ষিত।কিন্তু এ প্রান্তিকতা ফেলনা নয়, এ বিশ্বাসগুলো অবজ্ঞার নয়- এ ধারণাগুলো ওঠে আসা দরকার জাতির চোখের সামনে। এ বিশ্বাস থেকে জন্ম নেয় এক একটি স্থানীয় সংবাদপত্র।আজকের বিশ্বগ্রামের প্রেক্ষিতের জাতীয় কিংবা স্থানীয় বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু রাজধানী কেন্দ্রিকতা, বেশি সার্কুলেশন আর পুঁজির কেন্দ্রমুখীতার কারণে কিছু কিছু পত্রিকা জাতীয় পত্রিকার জুব্বা পরলেও আসলে তা ফায়েদা লুটার খোলস মাত্র। তাই যাই হোক আর কোনো সমর্থক শব্দ থাক না থাক স্থানীয় পত্রিকা শব্দটি অনেক বেশি অহংকার বোধের উচ্চারণ। একটি দ্বাম্বিক অবস্থার মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় একটি একটি স্থানীয় সংবাদপত্র। একদিকে তাদের পাঠক দায়বদ্ধতা । অন্যদিকে তাদের আর্থিক অসংগতি। এ দুয়ের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অনেক পত্রিকা তাদের আদর্শের লড়াইয়ে শেষ নাগাদ টিকতে পারে না। কোনো কোনোটির অকাল মৃত্যু হয়। আবার কোনো কোনোটি খুড়িয়ে খুড়িয়ে বেঁচে থাকে। স্থানীয় পর্যায়ে সুশাসন, মানবাধিকার, প্রতিষ্ঠায় অবশ্যই স্থানীয় পত্রিকার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। কিন্তু স্থানীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির যেমন এ শিল্পের সহায়তায় কোনো আগ্রহ নেই তেমন সরকারের কাছেও নেই। পত্রিকাকে বাঁচানোর জন্য সরকারি বিজ্ঞাপন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক। অথচ সরকারি বিজ্ঞাপন বিতরণ হয় সরকার ও তার সমর্থিত দল, প্রশাসনকে তোয়াজ তোষণের মাপকাঠিতে। এতে করে সরকারি বিজ্ঞাপনকে পত্রিকার সহায়ক নয় বরং হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পাশাপাশি বিজ্ঞাপন বন্টনে রয়েছে ম্যালা ধরনের আইনী মারপ্যাচ। এতে করে স্থানীয় বেশিরভাগ পত্রিকাই বিজ্ঞাপন পায় না। দুএকটি পত্রিকা বিজ্ঞাপন পেলেও যত টাকা বিজ্ঞাপনের দাম তার অর্ধেক কর্মকর্তাদের নাজরানা দিতে হয়।সংবাদপত্র হচ্ছে একটি সমাজের দর্পন। গ্রাম নিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে দেখতে হলে গ্রাম দেখতে হবে। গ্রামের সংবাদপত্রগুলোকে দেখতে হবে। এ জন্য গ্রামের সংবাদপত্রের আরো বেশি প্রণোদনা দরকার। জরুরিভিত্তিতে দরকার সরকারি বিজ্ঞাপন বন্টন নীতিমালা (হাতিয়ার) সংস্কার। এছাড়াও স্থানীয় পত্রিকাগুলোকে প্রাত্যহিক প্রযুক্তিগত বাধা, প্রশাসনিক প্রতিকূলতা, সংবাদকর্মীদের অদক্ষতা, রাজনৈতিক হুমকিসহ ইত্যকার বিষয়গুলো মোকাবেলা করতে হয়।এসবের পরে স্থানীয় পত্রিকাগুলো বেরুচ্ছে। এখন শুধু দরকার এগুলোকে আরো জনমুখী করে তোলা। সেজন্য সরকার, বেসরকারি সংগঠন, নাগরিক সমাজ এবং ব্যক্তিক অংশগ্রহন নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

No comments: