- আপনার বাসা এইটা ?- হাঁ- এই, এইটা রে গাড়িতে তোল।- মানে ?- মানে কী, মারামারিতে তুমিও ছিলা, এখন জামাকাপড় বদল কইরা আসছ।
এটা কথা বলে আমার হাত ধরে টেনে গাড়ির দিকে নিয়ে যায় দুুজন দায়িত্ববান (!) সাবইন্সপেক্টার। আমি বললাম, আমি ভাই কিছু জানি না। আমাকে নিয়ে টানাটানি করেন কেন? কে শোনে কার কথা। পাশ থেকে একজন বললো, উনি সাংবাদিক। এতে করে সাবইন্সপেক্টার দ্বয় সামান্য থামেন। তারপর বললেন কিসের সাংবাদিক(!!!) ?
হঠাৎ কি হলো কে জানে। এক সাবইন্সপেক্টার বললো, গাড়িতে তোলার দরকার নেই, তুমি আমার সাাথে আস। আমি তার সাথে গেলাম। তিনি আমাকে আলাদা নিয়ে জেরা শুরু করলেন। আমার হাতের বাহু ধরে নিয়ে আসার সময় যে কর্মকর্তা বলেছিলেন, মারামারিতে তুমিও ছিলা, এখন জামাকাপড় বদল করে আসছ। তিনি আমাকে প্রথম প্রশ্ন করলেন, ঘটনার সময় কোথায় ছিলা। কি বিচিত্র!! যিনি একটা আগে দেখেছেন আমি মারামারি করে আবার জামাকাপড় বদল করে এসেছি, তিনি আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন ঘটনার সময় আমি কোথায় ছিলাম। কিন্তু বিচক্ষণতা!!!
এটা ২২ অক্টোবরের ঘটনা। আবাসিক এলাকায় একটা রাজনৈতিক দলের দুুটো গ্র“পে মধ্যে মারামারি লেগেছে। আমার বাসা এবং অফিস এখানেই। আমি বাসা থেকে বেরিয়ে দেখি একদলের বেশ সাজসাজ ভাব। একটু সামনে আসতেই বোমা ফাটার শব্দ পেলাম, চার পাঁচটা। আমি ভাবলাম কি হতে কী হয়, আবাসিক এলাকা। তাছাড়া আমার বাসার কাছেই প্রায়। আমি আমার এক অগ্রজ সাংবাদিককে ফোন করলাম। তারপর আর কী করা, আমি ভাবলাম শেষ ভরসা পুলিশকে বিষয়টা জানাই। সুধারাম থানায় ঢুকতেই দেখলাম এক সাবইন্সপেক্টার দাঁড়িয়ে আছেন। তাকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। এর আগে এসপি অফিসে ছিলেন। শুনেছি এরপর প্রমোশন নিয়ে এসআই হয়ে সুধারাম থানায় বদলি। আমি তাকে বিষয়টা বললাম। তিনিও বোধহয় তখন বেরুবেন। তিনি বললেন একটু ওসি স্যারকে বিষয়টা বলেন। তার কথা শুনে আমার মনে হচ্ছিল তিনি বোধ হয় আসতে চাচ্ছেন না। অথবা আসতে ভয় পাচ্ছেন। যত কিছু হোক মারামারির ভেতরে কে আসে। জীবনের ভয় তো আছেই। আমার কথা শেষ করে আমি আবার বাসার দিকে রওনা হলাম।
আমার বাসার সাথে বেসরকারি সংস্থা এনআরডিএসের অফিস। সেখানে কতসময় থেকে আমার বাসার সামনে এসে দাঁড়ালাম। কতক্ষণ বাদেই শুরু হলো আমাকে নিয়ে এ ঘটনা। মজার কাহিনী হলো, আবার যে দুজন কর্মকর্তা আমাকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন তাদের মধ্যে একজনকেই আমি থানায় গিয়ে মারামারির খবরটা দিয়েছিলাম। মারামারিতে আমিও ছিলাম বলে যে স্বপ্নপ্র্প্ত কাহিনী উপস্থাপন হচ্ছিল তখনও তিনি নির্বিকার দাঁড়িয়ে।
এ হচ্ছে আমাদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থা। আমি জানি না কেন সে দিন আমাকে ধরে নিয়ে তাৎক্ষণিক জেরা করলো। ঘটনা শেষে কয়জনকে আটক করতে হবে, এ জন্য? নাকি আমাকে চিনতে পারেনি ? আমার মনে হয় চিনতে পারেনি। কারণ শ্রদ্ধাভাজনেষু এসআই মহোদয় যখন আমার সাথে জেরা শেষ করলেন তখন আরেকজনকে বলছিলেন, কি কর মিয়া লোকজন চিন না। যদি আসলেই আমাকে না চিনে থাকেন তাহলে আরো কিছু প্রশ্নবোধক তৈরি হয়। তাহলে কি পুলিশ প্রায় এ রকম মানুষ চিনতে ভুল করেন। অনেক মানুষকেই কি এ রকম ভুলের প্রায়শ্চিত্য দিতে হয়? মজার ব্যাপার হলো আমার বাসার সামনে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দায়িত্ববান (!) সাবইন্সপেক্টার মহোদয় একটি অভিজ্ঞ ও চমকপ্রদ তথ্য দিলেন, আমি নাকি মারামারি করে আবার জামাকাপড় বদল করে তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছি। অবশ্য আমি বলার পর আমার কাছ থেকে তথ্যগ্রহণকারী কর্মকর্তা আমাকে চিনতে পেরেছিলেন।
পুলিশকে বলা হয় জনগণের বন্ধু। কিন্তু যে কয়বার আমার সাথে তাদের কর্মযোগাযোগ হয়েছে আমি তাদের মধ্যে একবারও এ জাতীয় বন্ধুভাবাপন্ন আচরণ দেখিনি। প্রথমত আমি একজন মানুষ, তারপরও আমার আরো পরিচয় থাকতে পারে। আর সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি এ দেশের নাগরিক। যে নাগরিকের জন্য পুলিশ, বন্ধুক(!) ইত্যাদি। আমাকে যখন ঐ কর্মকর্তা জেরা করছেন তিনি আমাকে সম্বোধন করছেন ‘তুই’ বলে। আমি জানি না ক্রিমিনালজি থিউরিতে মানুষকে সম্মান না করে কথা বলার কথা লেখা আছে কিনা।
দিন তিনেক আগে কোম্পানিগঞ্জে পুলিশের গুলিতে ০৫ জন ব্যবসায়ী মারা গেছ্।ে ঐ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন ঐদিন কোম্পানিগঞ্জে গুলি করে মানুষ মারার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমাকে যকন জেরা করছিল তখন আরেক পুলিশ কর্মকর্তা দাড়িয়ে থাকা মানুষদের উদ্দেশ্য করে বেশ দম্ভ নিয়ে বলছে, আপনারা সব সরেন, কোম্পানিগঞ্জে যে পাঁচটা সাইজ হইছে মনে নাই ?
আসলে আমরা কোথায় থাকবো? রাষ্ট্র্র থেকে মদদ নিয়ে চলছে বিকল্প অমর্যাদাকর কর্মকান্ড। অন্য সন্ত্রাসীদের সাথে এ সন্ত্রাসের পার্থক্য হচ্ছে, অন্য সন্ত্রাসীরা সমাজে কিছু কিছু মানুষকে সম্মান করে, সমাজের আচরণ মূল্যবোধ সমূহ মেনে চলে আর এরা তা করেন না। অন্যরা সমাজের মানুষকে সম্মান করে বা দেখায় আর এরা তার উল্টোটা করেন। অন্যরা সবার সাথে অমর্যাদাকর আচরণ করেন না আর এনারা...............................................?
একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সেনাবাহিনী ছাড়া আর কারো কাছে অস্ত্র থাকা দরকার বলেও আমি মনে করি না। কিন্তু আমার দুঃভাগ্য আমাদের অন্যান্য বাহিনীর হাতে শুধু অস্ত্র না রীতিমতো এখন যুদ্ধ অস্ত্র শোভা পায়। অবশ্য এরও একটা ব্যাখ্যা থাকতে পারে। সন্ত্রাসীদের কাছে বড় বড় অস্ত্র আছে বিধায় পুলিশকেও তা রাখতে হয়। কিন্তু প্রশ্নটি যদি উল্টো হয়? পুলিশ বাহিনীর হাতে এসব নজরকাড়া (!) চকচকে অস্ত্র দেখেই অন্যরা এমনতর অস্ত্র জোগাড়ে অভ্যস্ত হয়।
যাই হোক, যার কাছে যত দারুন অস্ত্র থাক না কেন আমার কোনো আপত্তি আর নেই। আমার শুধু একটাই ভয় এত ভারী ভারী অস্ত্রের ট্রিগারের সামনে বসবাস করে আমরা সাধারণ মানুষ কতদিন বাঁচতে পারবো এ স্বাধীন দেশে ? আমাদের টেনশন কী কখনোই কাটবে না ? নাকি আমজনতাকে টেনশনে রাখাই পুঁজিতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূল খেলা ?
No comments:
Post a Comment